সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি পদে থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আরিফ। হাইকমান্ডের নির্দেশেই সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে এ সময় জানান তিনি।
২১ মার্চ সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এতে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন আরিফুল হকসহ তিনজন। এতদিন মহানগর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা আরিফুল হক জেলার সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল।
দ্বিধা-বিভক্ত বিএনপির রাজনীতিতে নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছিল বিরোধ। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই সম্মেলনের এক দিন আগে রোববার তা স্থগিত করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, সিলেটে বিএনপি এখন মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। এক বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, অপর বলয়ের নেতৃত্বে আরিফুল হক। তবে আব্দুল মুক্তাদির কেন্দ্রের শীর্ষ পদে থাকার সুবাদে সিলেটে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোতে তার বলয়েরই আধিপত্য। মুক্তাদিরের এই আধিপত্যে ভাঙন ধরাতেই আরিফ জেলার সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন বলে মনে করেন তারা। এরপর মুক্তাদিরই প্রভাব খাটিয়ে সম্মেলন স্থগিত করান বলেও তারা মনে করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সেই দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে আমার কাছে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় একজন ব্যক্তির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় দলের হাইকমান্ড মনে করেছেন, একজন মেয়র হয়ে সিলেটের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পরিশ্রম করার যে চেষ্টা করছি, সেই লক্ষ্যে আরও মনোনিবেশ করে আগামীতে দলের স্বার্থে বড় কোনো কাজের জন্য প্রস্তুত থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিএনপি আমাকে অনেক দিয়েছে, একজন জাগদল সমর্থক থেকে ছাত্রদল কর্মী হয়ে মেয়র আরিফ। আমি কখনও ভুলে যাই না দু-দুবার মেয়র হতে ভোটের লড়াইয়ে আমার প্রিয় নেতাকর্মী এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কী মরণপণ লড়াই করেছেন। এবং সেটি কেবল বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য করেছেন, শুধু আরিফের জন্য নয়।
‘আমি বিএনপি বাগানের মালি হয়ে আমার সারা জীবনের রাজনৈতিক জীবন চালিয়ে যেতে দৃঢ়সংকল্পে বলীয়ান। এই অবস্থায় বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশনার আলোকে আসন্ন সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিলে সভাপতির পদ থেকে আমার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’
আরিফ আরও বলেন, ‘মাত্র এক সপ্তাহে পথে পথে, রাত গভীরে, উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে যে মমতার নিদর্শন নেতাকর্মীরা দেখিয়েছেন, তাতে আমি বিমুগ্ধ এবং আমার পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ।
এই ভালোবাসার প্রতিদান নেই, হতে পারে না। আমি কেবল বলতে চাই- বিএনপি ছাড়া আমার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। বিএনপির কর্মী হয়ে আপনাদের মণিকোঠায় সারা জীবন বেঁচে থাকতে চাই।’
এ সময় সম্মেলন সফল করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চলতি মাসের মধ্যেই স্থগিত হওয়া সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার।