রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো বর্বরোচিত সহিংসতাকে অবশেষে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ কথা জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।
২০১৭ সালের পর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বিশ্বের শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কাছ থেকে এ রকম একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পক্ষে দাবি জানিয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গার ওপর চালানো নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, বর্বরতা ও ধর্ষণের অভিযোগকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেনি।
মিয়ানমার সেনাদের ভয়াবহ সেই সহিংসতা থেকে বাঁচতে কমপক্ষে আট লাখ মানুষ বাংলাদেশ, ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়।
এর পরপরই মিয়ানমার শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনার সুপারিশ ও দাবি জানায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন শক্তিধর দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
তবে বরাবরের মতো রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের গড়িমসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গণহত্যার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
ট্রাম্পকে হারিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরেও ১৪ মাস মিয়ানমার সেনাদের বিষয়ে লক্ষণীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হোয়াইট হাউস।
অবশেষে গণহত্যার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান ও বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন সুস্পষ্ট ঘোষণা মিয়ানমার সেনাদের বিচারের আওতায় আনার সম্ভাবনাকে ফের জাগিয়ে দিয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর গণহত্যার শিকার মানুষের স্মরণে হলোকস্ট মিউজিয়ামে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছে। এমন বর্বরতাকে পরিমাপ করতে আবারও প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।’
মিয়ানমার সামরিক বাহিনী সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০২১ সালে দেশটির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে হোয়াইট হাউসের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর ও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য জেফ মার্কলে বলেন, ‘অবশেষে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সহিংস ঘটনাগুলোকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করায় জো বাইডেন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। যদিও এই ঘোষণা আরও অনেক আগে আসা উচিত ছিল। তবুও এই ঘোষণা মিয়ানমারের নির্দয় শাসকগোষ্ঠীকে জবাবদিহির আওতায় আনার পথে কার্যকর ধাপ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’