বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিমানের টরন্টো ফ্লাইটে যাত্রী কারা?

  •    
  • ২১ মার্চ, ২০২২ ১৯:৫৫

বিমান প্রতিমন্ত্রীর সফরের খরচ আসবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। আর বাকিদেরটা দেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তাদের শুধু ফ্লাইট টিকিটের খরচ দেবে বিমান। এর বাইরে বিমান প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী ও মেয়েও প্রতিনিধি দলে থাকছেন, তবে তারা টিকিটসহ নিজেদের পুরো খরচ নিজেরাই বহন করবেন।

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-টরন্টো রুটের একমাত্র পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তার একটি সরকারি প্রতিনিধি দল কানাডা সফর করছে। একটি রুটের উদ্বোধনী ফ্লাইটে এতজন সরকারি কর্মকর্তার বিদেশ সফরে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটটি ২৬ মার্চ রাত ১১টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং ২৭ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৭টায় এটির টরন্টোয় অবতরণ করার কথা রয়েছে। বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিকিট কেটে যে কেউ এই ফ্লাইটে টরন্টো যেতে পারবেন।

প্রতিনিধি দলে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বিমানের পরিচালক মৃধা মো. একরামুজ্জামান এবং প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা আছেন।

বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিমন্ত্রীর সফরের খরচ আসবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। আর বাকিদেরটা দেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তাদের শুধু ফ্লাইট টিকিটের খরচ দেবে বিমান। এর বাইরে বিমান প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী ও মেয়েও প্রতিনিধি দলে থাকছেন, তবে তারা টিকিটসহ নিজেদের পুরো খরচ নিজেরাই বহন করবেন।

গত শনিবার বিকেলে এই ফ্লাইটটির টিকিট উন্মুক্ত করে বিমান। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানানো হয়। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে যে উদ্বোধনী ফ্লাইটি সবার জন্য নয়, শুধু বিমানের নির্ধারিত যাত্রীরাই এতে ভ্রমণ করতে পারবেন। অবশ্য পরের দিন ফ্লাইটটির বেশ কিছু টিকিট ফাঁকা রয়েছে বলে বিমানের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানানো হয়।

বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফ্লাইটটি পরীক্ষামূলক হওয়ায় সীমিতসংখ্যক যাত্রীকেও এতে ভ্রমণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ফ্লাইটের টিকিট শুধু বিমানের নির্ধারিত যাত্রীদের জন্য, এমন তথ্য নাকচ করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টরন্টোর উদ্বোধনী ফ্লাইটটি সবার জন্যই উন্মুক্ত। এটি কোনো ভিআইপি ফ্লাইট নয়। যে কেউ টিকিট কেটে এই ফ্লাইটে যেতে পারবে। হয়তো আসনসংখ্যা কম হতে পারে, কিন্তু এটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

‘এই রুটে ফ্লাইট শুরু করতে আমাদের কমিটমেন্ট ছিল, সেটির জন্যই মার্চে এই ফ্লাইটটি করা হচ্ছে। ফিরতি ফ্লাইটের ক্ষেত্রে সেখান থেকে ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাবে না, তবে আমাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে যে কেউ টিকিট কাটতে পারবেন।’

টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট বিজি ৩০৬ আগামী ২৯ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। এটি ৩০ মার্চ দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকায় অবতরণ করবে। রুটটিতে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমান ব্যবহার করছে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।

ফ্লাইটে এতসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের সমালোচনা করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহেদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে আমি এভিয়েশন নিয়ে কাজ করি। আমি আমার জীবনে কোনোদিন শুনিনি এ রকম টেস্ট ফ্লাইট যায়। এ রকম কোনো সুযোগ আছে বলেও আমি জানি না। সবকিছুই সম্ভব এ দেশে।

‘সরকারের যদি পয়সা বেশি হয়, তারা তো পাঠাতেই পারে। বালিশ-চাদর কিনতে বা পুকুর কাটার প্রশিক্ষণ নিতে যদি যেতে পারে, তাহলে ফ্লাইটে যেতে পারবে না কেন?’

অবশ্য কানাডায় বিমানের ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘কানাডায় ফ্লাইট অপারেশন আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত যে বিমান এই রুটটি শুরু করছে। কিন্তু সেটির প্রস্তুতি তো সুচারুভাবে নিতে হবে। এটিকে সেলিব্রেট করতে হবে। বিমানের ব্র্যান্ড ইমেজ নিম্নের পর্যায়ে, এর মাধ্যমে এটি তারা ব্র্যান্ডিং করতে পারত।

‘কানাডার টরন্টোয় কিন্তু বিশ্বের খুব বেশি এয়ারলাইনস অপারেট করতে পারে না। তারা এ বিষয়ে খুব কনজারভেটিভ। কাতার এয়ারের এত এয়ারলাইনস, কিন্তু একটি এয়ারলাইনস এখনও টরন্টোয় ফ্লাইট করার অনুমতি পায়নি। এ রকম অনেক বড় এয়ারলাইনস এ রকম সুযোগ পায়নি, কিন্তু সেখানে বিমান এটি পেয়েছে।’

জুনে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু নিয়েও সংশয়

টরন্টো রুটে পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের পর বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করতে অন্তত ১০ সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে এত আগে কেন উদ্বোধনী ফ্লাইট করা হচ্ছে, তা নিয়েও সমালোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘আমি এর কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। এই রুটে আমাদের ফ্লাইট অপারেশনের জন্য কোনো প্যারামিটারেই আমরা রেডি নই। এখনও সেখানে আমাদের কোনো অফিস হয়নি, সেখানে কোনো জিএসএ (স্থানীয় প্রতিনিধি) নিয়োগ দেয়া হয়নি।

‘এর বাইরেও টরন্টো বিমানবন্দর এখনও বিমানের ফ্লাইট গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হয়নি। তারা এখনও ডিপার্চার কন্ট্রোল সিস্টেম সিনক্রোনাইজ করেনি। আরেকটি বিষয় হলো কানাডায় বছরের বেশির ভাগ সময় বরফ পড়ে, ঝড় হয়। সেখানে ল্যান্ড করার জন্য পাইলটদের একটি বিশেষ সিকিউরিটি সার্টিফিকেট নিতে হয়। এটি এখনও নেয়া হয়নি। সেটির জন্য সময় লাগবে। বিমান ইজ নট রেডি। তারা জুনের কথা বলছে, এর মধ্যে যে চালু হবে তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে।’

পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট কবে নাগাদ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে বিমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করতে কিছু ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেমের কাজ এখনও চলমান, এগুলো শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

‘পুরোদমে বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করতে জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। আমরা বলেছি, সব কাজ সম্পন্ন করতে মোট ১২ সপ্তাহ সময় লাগবে। এর মধ্যে দুই সপ্তাহ পেরিয়েছে, কাজ আমরা চলমান রেখেছি। এই সময়ের মধ্যে সেখানে জিএসএ নিয়োগ দিতে হবে, সে কাজ আমরা চলমান রেখেছি। আশা করছি, জুনে আমরা বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু করতে পারব।’

ঢাকা থেকে জাপানের নারিতা হয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং কানাডার টরন্টো হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যুক্ত হতে চেষ্টা বেশ কয়েক বছর ধরেই চালিয়ে আসছে বিমান। কিন্তু করোনার কারণে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি।

এ রুটটিতে বিমানের ফ্লাইট চলাচল পুরোদমে শুরু হলে এয়ারলাইনসটি তার বহরে থাকা লম্বা পাল্লার উড়োজাহাজগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টো যেতে সময় লাগে প্রায় ১৪ ঘণ্টা।

বিমানের বহরে লম্বা দূরত্বে উড়তে সক্ষম অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ থাকলেও রুট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং ৭৮৭ ও চারটি বোয়িং ৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজ। এর প্রত্যেকটি টানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম।

লম্বা দূরত্বের মধ্যে বর্তমানে ফ্লাইট চালু রয়েছে শুধু লন্ডন রুটে। এ রুটে সরাসরি যেতে সময় লাগে প্রায় ১১ ঘণ্টা।

বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা কোনো এয়ারলাইনসেরই ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টোয় ফ্লাইট নেই। বিমান আশা করছে, নারিতা ও টরন্টোয় ফ্লাইট শুরু করলে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক আন্তর্জাতিক যাত্রী তারা পাবে।

এ বিভাগের আরো খবর