মাগরিবের নামাজের পর থেকেই নগরীর মসজিদে মসজিদে বাড়তে শুরু করে মুসল্লিদের ভিড়। সৌভাগ্যের বা মুক্তির রাত হিসেবে পরিচিত পবিত্র শবে বরাতে ইবাদত বন্দেগির জন্যই তারা এসেছেন মসজিদে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় আদায় করছেন নামাজ।
ছুটির দিন থাকায় কর্মব্যস্ততা বা যানজটের চাপ ছিল না। তাই নগরবাসী রয়ে সয়ে প্রস্তুতি নিয়ে জায়নামাজ হাতে এসেছেন মসজিদে।
রাত জেগে ইবাদাত করবেন বলে ঠিক করেছেন মিরপুর নিবাসী বাঁধন আহমেদ। তাই দূরে না গিয়ে বাড়ির পাশের মসিজদেই নামাজ আদায় করতে আসেন তিনি।
বাঁধন বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, উচিত হলেও নিয়ম করে নামাজ আদায় করা হয়ে উঠে না। তাই আজকের রাতে আল্লাহর দরবারে বেশি সময় থাকব। নিজের ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইব।’
মাহে রমজান ও সৌভাগ্যের আগমনী বার্তা নিয়ে পবিত্র শবে বরাত সমাগত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ রাতে মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজগারসহ বিভিন্ন ইবাদতে মশগুল হন।
হিজরি বর্ষের ১৪ শাবান রাতকে বলা হয় সৌভাগ্যের রজনী। বলা হয়ে থাকে, মহিমান্বিত এ রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে শুক্রবার মাগরিব ও এশার নামাজের পর এবং রাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এতে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নামাজ আদায় করে মোনাজাতে অংশ নিতে দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই এসেছেন। তাদের অনেককেই নিজের জায়নামাজ সঙ্গে নিয়ে আসতে দেখা গেছে।
পল্টনবাসী শরিফুল হক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় তো আর ইবাদাত বন্ধ রাখা যাবে না। তাই নিজের জায়নামাজ সঙ্গে নিয়ে এসেছি। সবার সঙ্গে নামাজ আদায় করার আলাদা ফজিলত আছে।’
আজকের রাতে সম্মিলিত মোনাজাতে করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জাননো হয়। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তিও কামনা করা হয়। হানাহানি ভুলে শান্তির পৃথিবী গড়ে তোলার কথাও জানানো হয় আল্লাহর দরবারে।
অনেকে মসজিদ থেকে ফিরে নিজ বাসাতেও ইবাদাত বন্দেগিতে মশগুল হবেন। বিশেষ করে নারীরা আজকের রাতে বাসায় বসে আল্লাহর নৈকট্য লাভে ইবাদাতে অংশ নেবেন।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর ইবাদাত বন্দেগির মধ্য দিয়ে দিনটি পার হলেও, এদিন নানা উপাদেয় খাবার তৈরির এক ধরনের সংস্কৃতি চালু রয়েছে।
নানা স্বাদের মিষ্টান্ন, সেমাই, হালুয়া তৈরি করা হয়। এ নিয়ে পুরান ঢাকায় রীতিমত ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেন। যারা বাসা-বাড়িতে এসব তৈরি করতে পারেন না, তারা সেখান থেকে পছন্দের খাবার কিনে নিয়ে যান।
এদিন বাড়িতে বাড়িতে ভালো খাবার তৈরিরও প্রচলন রয়েছে। মগবাজারে ব্যাচেলর জীবন যাপন করছেন মহিন উদ্দিন। বাসায় তিনি রান্না করেছেন পোলাও, মুরগীর মাংস আর ভাজা মাছ।
তিনি বলেন, ‘বাড়িতে থাকলে মা-বোনেরা নানা পদের খাবার দাবার তৈরি করে। নামাজ শেষে বাসায় ফিরে আরাম করে খাই। কিন্তু ঢাকায় সেই সুযোগ নেই। তাই একটু ভালো রান্নার চেষ্টা করেছি। যাতে ঐতিহ্যটা টিকে থাকে।’
এর আগে শবে বরাতের রাতে ইবাদতে মশগুল নগরবাসীর স্বস্তি দিতে শহরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব এর মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মোহাম্মদপুরের বসিলা জামিয়া ইসলামিয়া চরওয়াশপুর মাদ্রাসায় শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘প্রতি শবে বরাত এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একটি মহল পটকা, আতশবাজির মাধ্যমে নাশকতা ঘটিয়ে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও সাদা পোশাকে র্যাব পেট্রল নিয়োজিত থাকবে।’
উসকানিমূলক কোনো কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সাইবার মাধ্যমেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।