বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানুষ আইলে কাইন্দা ঢং করত: স্ত্রীকে নিয়ে দুই শিশুর বাবা

  •    
  • ১৮ মার্চ, ২০২২ ২১:৪৯

‘আজকা ৯ দিন অইব, আমার পুলা দুইডারে মারছে। তাইর (লিমা) ভিতরে দুঃখ আমার চোহে (আসলে মনে) পরছে না। বাইরে থেইক্কা মানুষ আইলেই কান্দে, ঢং করত। আজকা তাই উচিত শিক্ষা পাইছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহের তীর ‍পুরোপুরি পাল্টে যাওয়ার পর তাদের বাবা ইসমাইল হোসেন তার স্ত্রীর দ্বিমুখী আচরণের বিষয়টি সামনে এনে আক্ষেপ করেছেন।

দৃষ্টিহীন মানুষটি জানিয়েছেন, সন্তানের মৃত্যুর পর লিমা বেগমের মধ্যে শোকের প্রভাব তিনি বুঝতে পারেননি। তবে বাড়ির বাইরের লোকজন এলে কান্নাকাটি করতেন।

শুরুতে শিশু দুটির মা দাবি করেছিলেন, দোকান থেকে নাপা সিরাপ খাওয়ার পর সন্তানদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শুরু হয় তোলপাড়। নাপা সিরাপের পুরো ব্যাচ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়।

তবে বৃহস্পতিবার পুরো পরিস্থিতি ঘুরে যায়। পুলিশ জানায়, শিশু দুটিকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে। আর এ ঘটনায় লিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

পুলিশের দাবিটি এমন, লিমার সঙ্গে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল সফিউল্লা নামে একজনের সঙ্গে। দুজন এস আলম এগ্রো ফিড নামে একটি চালকলে কাজ করতেন।

সেখানকার শ্রমিকদের সর্দার ছিলেন সফিউল্লা। তিনিও বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে।

পুলিশের বর্ণনাটি এমন- লিমাকে বিয়ে করবেন, এমন আশ্বাস দিয়ে সফিউল্লা বলেন, তার পথের কাঁটা দুই সন্তানকে সরিয়ে দিতে হবে। তিনি বিষ মেশানো মিষ্টি দেন লিমাকে। আর লিমা সেগুলো খাওয়ান ছেলেদের। মৃত্যুর পর তিনি বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি করতে নাপা সিরাপের বিষয়টি তোলেন।

ছেলে দুটির বাবা ইসমাইল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজকা ৯ দিন অইব, আমার পুলা দুইডারে মারছে। তাইর (লিমা) ভিতরে দুঃখ আমার চোহে (আসলে মনে) পরছে না। বাইরে থেইক্কা মানুষ আইলেই কান্দে, ঢং করত। আজকা তাই উচিত শিক্ষা পাইছে।’

দৃষ্টিহীন ইসমাইল আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সিলেটের একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ৯ বছর আগে একই গ্রামের লিমাকে বিয়ে করেন তিনি।

এক বছরের মাথায় এই দম্পতির প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু মারা যায় তিন দিনের মধ্যে। পরে জন্ম নেয় আরও একটি ছেলে, যার নাম রাখা হয় ইয়াছিন খান। তারও দুই বছর পর লিমা জন্ম দেন আরেক ছেলে যার নাম রাখা হয় মোরসালিন খান।

আগের দিন ইসমাইল জানান, ঘটনার দিন তিনি সিলেটে ছিলেন। তাকে ফোন করে জানানো হয় দুই ছেলে অসুস্থ। গাড়ি থেকে নেমে সরাসরি তিনি থানায় যান। এরপর তাকে বাড়িতে নেয়া হয়।

স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়ে আগে জানতেন না দাবি করে ইসমাইল বলেন, পুলিশ এসে বাড়িতে যে মোবাইল ছিল, সেটা চায়। তিনি লিমাকে সেটি দিতে বলেন, কিন্তু লিমা বলে তার কাছে ফোন নেই; মিলের সর্দার নিয়ে গেছে। তখন প্রথম তার সন্দেহ হয়। বিষয়টি তিনি চেয়ারম্যানকে জানান। এরপর পুলিশ এসে তার স্ত্রীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে।

হত্যায় অভিযুক্ত মা লিমা আক্তার। ছবি: নিউজবাংলা

সফিউল্লার খোঁজে পুলিশ

লিমা যার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে দুই শিশুকে বিষ খাইয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই সফিউল্লার কোনো হদিস এখনও করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনার দিন থেকেই তিনি পলাতক বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জসিম আহমেদ।

তিনি জানান, সফিউল্লা আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর ইউনিয়নের মৈশ্বাই গ্রামের বাসিন্দা। তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তাকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

স্বাস্থ্য প্রশাসনের তদন্ত প্রকাশ হয়নি

এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার মৃত্যুর কারণ, চিকিৎসকের অবহেলাসহ নানা বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হলেও সেটি প্রকাশ করা হয়নি।

তদন্তে কী আছে সেটি সম্পর্কে কিছু জানাতে রাজি হননি তদন্ত কমিটির প্রধান ও কুমল্লিা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘এটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় অধিদপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার অধিকার নেই।’

দুই শিশুর ময়নাতদন্তের রিপোর্টও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন একরাম উল্লাহ। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এটি পরীক্ষা শেষে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।’

এ বিভাগের আরো খবর