বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুলের মালা বিক্রি করে সংসার চালান বৃদ্ধ রশিদ মিয়া

  • নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ    
  • ১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:৩৫

মানুষের কাছে হাত না পেতে বৃদ্ধ বয়সে জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন একাই। জয় পরাজয় বুঝেন না, বাঁচার জন্য খেতে হবে। ঘরে বসে থাকলে খাবার আসবে না। কাজ করেই খেতে হবে। কাজ না করলে ভিক্ষা করে খেতে হবে। মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করতে আব্দুর রশিদ মিয়ার লজ্জা করে। তাই তো জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও হাল ছাড়েননি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গুতিয়াবো গ্রামের আব্দুর রশিদ (৯০)। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও প্রতিদিন সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে তিনি শুরু করেন জীবনের লড়াই। চন্ডীতলা এলাকার এক বকুল গাছের নিচে পড়ে থাকা ফুল কুড়িয়ে তিনি নিজেই মালা গেঁথে বাজারে বিক্রি করেন।

এত ব্যবসা থাকতে ফুল বিক্রি করেন কেন জানতে চাইলে মুচকি হেসে বলেন, একটা সময় আমিও ফুল খুব ভালবাসতাম। আজ সে ভালবাসা পেটের দায়ে টাকায় বিক্রি করি। বাবাগো এত শুধু ফুল বিক্রি না, ভালোবাসা বিক্রি করি, জীবন সংগ্রামের নামে আমি ভালোবাসা বিক্রি করি। ভালোবাসার প্রতিক ফুল। আজো মানুষ ভালোবাসে তাই ফুল কিনা ভালোবাসার মানুষকে দেয়, আমারও ভালো লাগে। আয়ও মন্দ না, চলে যায় মোটামুটি।

প্রতিটি মালা মাত্র ২০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। দিনের পরিশ্রম শেষে প্রায় এক হাজার থেকে বারোশো টাকা আয় হয় তার। তবে সবদিন সমান যায় না—কখনো বিক্রি কম হয়, আবার কখনো ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে ভালো দামও পান। আব্দুর রশিদ নিজেই স্মৃতিচারণ করে বলেন, “পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় একদিন আমি দুইটা মালা নিয়ে গিয়েছিলাম। একজন ক্রেতা খুশি হয়ে আমাকে ৭০০ টাকা দিয়েছিলেন। তখন মনে হয়েছিল, এখনও মানুষ ভালোবাসা দিতে জানে।

৯০ বছরের এই বৃদ্ধের সংসারে রয়েছে দুই ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলেরা নিজের মতো কাজকর্ম করেন, তবে সংসারের খরচ টানতে আব্দুর রশিদ এখনো নিজের শ্রমে নির্ভরশীল। রাজধানীর খিলক্ষেত, বসুন্ধরা, পূর্বাচল ৩০০-ফিট, গাউছিয়া—এসব এলাকার রাস্তা ঘুরে ঘুরে তিনি ফুল বিক্রি করেন।

জীবনের কঠিন বাস্তবতা সত্ত্বেও আব্দুর রশিদের মুখে নেই কোনো অভিযোগ। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, শরীর যতদিন সায় দেবে, ততদিন নিজের হাতেই উপার্জন করে খাবো।

স্থানীয়রা জানান, আব্দুর রশিদ একজন পরিশ্রমী ও সৎ মানুষ। তার বয়সকে অতিক্রম করে কাজ করার ক্ষমতা দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হন। জীবনের সংগ্রাম আর শ্রমের মধ্য দিয়েই তিনি যেন এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন—কষ্টকে জয় করার অদম্য শক্তি নিয়েই তিনি পথ চলছেন।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, এত বয়সেও উনি কাজ করেন, এ জন্য উনাকে আমার পক্ষ থেকে স্যালুট জানাই। আমার সাথে যোগাযোগ করলে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দিব। অন্যান্য সুযোগ থাকলে তাও দেখব।

এ বিভাগের আরো খবর