রাজধানীর ওয়ারীতে রাধাকান্ত জিউ মন্দিরের দাবি করা জায়গায় বৃহস্পতিবার রাতে যে ভাঙচুর চালানো হয়, সেটি জায়গাটি দখলের উদ্দেশ্যে। জায়গার আরেক দাবিদার স্থানীয় শামস শফিউল্লাহ ও তার লোকজন এই ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ পরিস্থিতিতে আদালতে জমির মালিকানার বিষয়টি পুরোপুরি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষ এটির দখল নিতে পারবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার দুপুরে ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে মন্দির ও স্থানীয় ব্যক্তির বিরোধ রয়েছে। পুলিশ এটি সমাধান করতে পারবে না। মালিকানার বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে হবে। তার আগে কেউ দখলে যেতে পারবে না। কেউ অগ্রাহ্য করে নিজে দখল বা বেদখল করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।
রাতে জায়গা দখলের জন্য এসে দেয়াল ভাঙাকে অপরাধ হিসেবে দেখছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতেই আমরা মন্দির কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। সে অনুযায়ী মন্দিরের সেবক সুমন্ত্র চন্দ্র ওয়ারী থানায় মামলা করেছেন। মামলায় শামস শফিউল্লাহ, তার ছেলে সুফিসহ অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জমিসংক্রান্ত বিষয়ে আমরা সমাধান দিতে পারব না। কিন্তু বিরোধপূর্ণ জমিতে যেন স্থিতাবস্থা থাকে, সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। মালিকানা কে পাবে, তা আদালত নির্ধারণ করে দেবে। এর আগে দখল, বেদখল চলবে না।’
ওয়ারীর নারিন্দা ভূতের গলিতে ২২২ নম্বর দাগে রাধাকান্ত জিউ মন্দির। শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা মন্দির কাঠামের পাশে জরাজীর্ণ কক্ষ রয়েছে কয়েকটি। গলির শেষ মাথায় একটি একতলা বাড়ি, যা আছে শামস শফিউল্লাহর দখলে। ওই বাড়িটিও মন্দিরের জমিতে বলে দাবি মন্দির কর্তৃপক্ষের।
শফিউল্লাহর বাড়ি ও মন্দির কাঠামোর মাঝামাঝি জরাজীর্ণ পুরোনো ভবনের দেয়াল ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শামস শফিউল্লাহ ও তার লোকজন এ জায়গাটি দখল নিতে ভবনের দেয়াল ভেঙে ফেলেন বলে অভিযোগ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ আদালতে তিনটি মামলা করেছিল। সেই মামলাগুলো আদালত খারিজ করে দিলে শামস শফিউল্লাহ জায়গা দখলে আসেন।
ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার বলেন, ইসকন মন্দিরের মামলাগুলো খারিজ হয়ে যাওয়ায় শফিউল্লাহ হয়তো ভেবেছেন জায়গাটা তার হয়ে গেছে। কিন্তু মন্দিরের আপিল করার সুযোগ আছে।
তবে মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক রুপানুগ প্রভু বলেন, ‘আমরা জমির মালিকানা নিয়ে কোনো মামলা করিনি, যেটা খারিজ হওয়ার পর অন্য দাবিদার এসে দখল করবেন। আমরা তিনটি মামলা করেছিলাম ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারায়। যেটা আদালত খারিজ করেছে। জবর-দখলকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এই ধারায় ফৌজদারি মামলা করা হয়ে থাকে।’
রুপানুগ প্রভু বলেন, ‘গতকালের হামলা নিয়ে আমরা অভিযোগ করেছি। তারা অতর্কিতভাবে হামলা করে আমাদের মন্দিরের জায়গায় দেয়াল ভেঙেছে। আমাদের দুজনকে উঠিয়ে নিয়ে মারধর করেছে।
‘জায়গার অন্য দাবিদারকে নিয়ে বসার জন্য বলা হয়েছে। আগামীকাল আমরা বসব। পুলিশ দুপক্ষকেই ডেকেছে।’
তবে দখলচেষ্টায় অভিযুক্ত শামস শফিউল্লাহর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।