তিন দিনের স্বর্ণমেলা শুরু হয়েছে। দেশের জুয়েলারি শিল্পকে দেশে ও বিদেশে নতুন করে তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মদিনে মেলার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। ১৯ মার্চ শনিবার শেষ হবে মেলা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর দুপুরে মেলা পরিদর্শনে গিয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এদের বেশির ভাগই ছিলেন নারী। তবে তারা কেনার চেয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন বেশি। বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের স্বর্ণালংকারটি দেখছেন; দরদাম করছেন।
সুলতানা রহমান নামে একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভালোই লাগছে। অনেক মেলা দেখেছি। কিন্তু গোল্ডের গয়নার এমন মেলা আগে কখনই দেখিনি।’
কোনো স্বর্ণালংকার কিনেছেন কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে সুলতানা বললেন, ‘না, এখনও কিনিনি। দেখছি…পছন্দ করছি। আরও দেখব, তারপর কিনব। প্রয়োজনে আরেক দিন আসব।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেয়া হয় ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা বিনা মূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য র্যাফেল ড্রতে নগদ ১০ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার, ৫ লাখ টাকার দ্বিতীয় পুরস্কার এবং তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে পরবর্তী ১০ জনের জন্য রয়েছে ১ লাখ টাকা করে ১০টি পুরস্কার।
দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা এই মেলায় দুই লাখের বেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। মোট ৬৫টি স্টল অংশ নিয়েছে। দেশ-বিদেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা এতে অংশ নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে দেশের স্বর্ণশিল্পীদের হাতে গড়া নতুন নতুন ডিজাইনের অলংকারের পরিচিতি ঘটবে বলে আশা করছেন তারা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক দিন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। স্বর্ণমেলার জন্য আজকের মতো শুভদিন আর হয় না। এই মহান দিনে জুয়েলারি শিল্পের নতুন একটি যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি মনে করি গার্মেন্টসের মতোই দেশের স্বর্ণশিল্পও বিশ্ববাজারে জায়গা দখল করে নেবে।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো ভালো কিছুকে সোনার সঙ্গে তুলনা করা হয়। সোনা এতই মূল্যবান। বাংলাদেশ গার্মেন্টসের পরই দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি শিল্প হিসেবে সোনা জায়গা দখল করে নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
বাজুসের সাবেক সভাপতি দিলীপ কুমার রায় বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। আগামীতে এই শিল্প দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। সরকার রাজস্ব পাবে। বিদেশি ক্রেতারা স্বর্ণের জন্য বাংলাদেশে আসবেন।’
আরেক সাবেক সভাপতি এনামুল হক খান দোলন বলেন, ‘আমাদের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে এই মেলার মাধ্যমে। তাই আজ আমাদের আনন্দের দিন।’
বাজুসের বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গুলজার আহমেদ বলেন, ‘অবহেলিত জুয়েলারি শিল্পকে আধুনিক করতে কাজ করছে বাজুস। ইতোমধ্যে বাজুসের ২৫ হাজার সদস্য থেকে ৫০ হাজার সদস্য হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে বাজুসের ৭৫ হাজার সদ্যস্য হয়ে যাবে।’
সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের অলংকার বিশ্ববিখ্যাত। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে অমাদের স্বর্ণালংকারকে বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আশা করি, সফল হব।’
সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্প নিয়ে নতুন স্বর্ণ দেখছি আমরা। শুধু দেশের চাহিদা নয়, বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে চাই আমরা।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাজুসের সহসভাপতি হান্নান আজাদ, আনিসুর রহমান দুলাল, দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন কোষাধ্যক্ষ ও মেলা কমিটির চেয়ারম্যান উত্তম বণিক।