বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশুশিক্ষাকে আনন্দময় করা যাবে কীভাবে

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২২ ১২:৩২

দেশের সব শিশুকে আনন্দের ছলে বা কৌশল করে শেখানো হয়ে উঠে না সেভাবে। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গতানুগতিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করানো হয়। স্কুলের কক্ষগুলোও সেখানে আকর্ষণীয় নয়। এভাবে পড়াশোনাকে শিশুরা চাপ বলে ধরে নিতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান যখন কানাডায় থাকতেন, তখন তার সন্তান কেবল স্কুল শুরু করেছে। বাংলাদেশের সনাতন শিক্ষা পদ্ধতির তুলনায় সে দেশের স্কুলগুলোর শিক্ষায় কী পার্থক্য-সেটি জানালেন তিনি।

নিউজবাংলাকে মাহমুদুর বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে স্কুল থেকে পড়াশোনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। ফায়ার সার্ভিস নিয়ে একটি বিষয়ে পড়ানোর আগে তারা আগে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে তাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসত।

‘এ ছাড়া তারা শিশুদের বিভিন্ন শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র/কার্টুন দেখানোরও ব্যবস্থা করত স্কুলে। মূল কথা হলো শিশুকে খেলার ছলে শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে সে আনন্দ পাবে, পড়াশোনায় উৎসাহী হবে।’

শিশুদেরকে খেলার ছলে কাজ করালে কী সুফল পাওয়া যায়, তা দেখা গেল প্রায় পাঁচ বছর বয়সী স্বরিৎ ঋতি ভোরের ক্ষেত্রে। সবজি ও মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল প্রায়। তার বাবা-মা চাপ না দিয়ে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যায়। সেখানে যেসব পশু সবজি খায়, সেগুলো দেখিয়ে আনার পর, সে ঘোড়াকে কথা দিয়ে আসে সবজি খাবে। সত্যি সত্যি বাসায় এসে কিছু সবজি খাওয়া শুরু করে।

আবার বইমেলায় সিসিমপুর দেখে এসে হালুমকে (বাঘের চরিত্র, যে কি না প্রচুর মাছ খায়) কথা দিয়ে আসে, সে মাছ ভাজা খাবে। এরপর থেকে মাংস খাওয়ায় আগ্রহ কমে মাছে মন দেয় সে।

এভাবে নানা কৌশলে ভোরকে পড়াশোনা করানো হয়, যাতে সে কখনও চাপ হিসেবে নেয়। তার স্কুলেও শেখানো হয় একই কৌশলে। সেখানে সপ্তাহে চার দিন বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস হয়, এক দিন থাকে শরীর চর্চা। তাতে অনলাইনে শিশুদের নানা কনটেন্ট দেখানোর পাশাপাশি নাচের ব্যবস্থা থাকে।

কিন্তু দেশের সব শিশুকে এভাবে আনন্দের ছলে বা কৌশল করে শেখানো হয়ে উঠে না সেভাবে। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গতানুগতিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করানো হয়। স্কুলের কক্ষগুলোও সেখানে আকর্ষণীয় নয়। এভাবে পড়াশোনাকে শিশুরা চাপ বলে ধরে নিতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রাক-প্রাথমিকে খেলার ছলে, গানের ছলে, নাচের ছলে বাচ্চারা শিখছে। আর মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রমে এ বিষয়টির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ আনন্দময় পরিবেশে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনও শিক্ষানীতির এ বিষয়টি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শিশুদের পড়াশোনা অবশ্যই আনন্দদায়ক হতে হবে। তা না হলে হয়তো সে অনীহা সত্ত্বেও পড়াশোনা করবে। কিন্তু তাতে পড়াশোনার যে উদ্দেশ্য তা অপূরণীয়ই থেকে যাবে।’

অভিভাবকরা অনেকেই জানিয়েছেন, শিশুরা অনলাইনে ক্লাস করতে চায় না। ছবি: নিউজবাংলা

পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করার গুরুত্ব আরোপ করে এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘বইগুলো এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যেন শিশুরা তা দেখে পড়তে উৎসাহী হয়। একই সঙ্গে শিশুদের আগ্রহের প্রতি খেয়াল রেখে শেখার মাধ্যম নির্বাচন করতে হবে।’

বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বিদেশে প্লে বা শিশু শ্রেণির শিশুরা পড়াশোনার চেয়ে স্কুলে বেশি এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত থাকে। আর বলা যায় সেখানে পড়াশোনার মাধ্যম এমনভাবে তৈরি, যে কেউ পড়াশোনায় আনন্দ পাবেই।’

একই সুরে কথা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক। তিনি বলেন, ‘শিশুদের উৎসাহ দিতে হবে। প্রয়োজনে চাইল্ড সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। এতে শিশুর মানসিক বিকাশ যেমন হবে, তেমনি পড়াশোনার যে উদ্দেশ্য তাও পূরণ হবে।’

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম শিশুদের জন্য পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘না হলে শিশুরা পড়াশোনায় আগ্রহী হবে না। এ কথাটা আমরা সরকারকে বারবার বলে আসছি। সম্প্রতি সরকার বলছে নতুন শিক্ষাক্রমে এর বাস্তবায়ন হবে।’

ইতোমধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে সব শ্রেণির পড়াশোনা যেন আনন্দদায়ক হয় সে বিষয় মাথায় রেখে পাঠ্যবই তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। শুধু পাঠ্যবই নয়, সহশিক্ষায়ও সমান গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’

কী ধরনের পরিবর্তন করা হচ্ছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজগুলো ঝকঝকে তকতকে করে এতে ছবির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে, কার্টুনের ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে শিশুদেরকে বইয়ের বাইরে নানা বিষয় যুক্ত করা যায় বলে মনে করেন এক সন্তানের আইনজীবী নাহিদা খানম। তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে বইমেলায় সিসিমপুর দেখিয়ে আনার পর সে বলে টুকটুকি বই পড়ে, আমিও পড়ব। তাকে রাতে কয়েকদিন বই পড়িয়ে শোনানোর পর ঘুমিয়েছে।’

স্কুলগুলোতে যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর এই ধরনের আয়োজনগুলো করা যেত বা পুতুল নাচ অথবা অন্য কোনো আয়োজন করা যেত, তা ছবি আঁকা অথবা গানের মতো আয়োজনগুলো হলে বাচ্চারা উৎসাহ পেত বলে ধারণা তাদের।

এসব বিষয় ভাবনায় আছে কি না-জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এগুলো করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় সব জায়গায় এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’

দেশে প্রথমে ২০১০ সালে স্বল্প পরিসরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। ছবি: নিউজবাংলা

প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা বলেন, ‘শিশু শ্রেণিতে খেলার ছলে, গানের ছলে, নাচের ছলে বাচ্চারা শিখছে। আমরা প্রতিনিয়ত বিষয়টি ডেভেলপ করছি।’

দেশে প্রথমে ২০১০ সালে স্বল্প পরিসরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এরপর ২০১৪ সালে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়।

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তর রয়েছে যা ‘শিশু শ্রেণি’ নামে পরিচিত। ইংরেজি মাধ্যম ও কিন্ডারগার্টেনে প্লে, নার্সারি ও কেজি শ্রেণি প্রাক-প্রাথমিক স্তরের মধ্যে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান যখন কানাডায় থাকতেন, তখন তার সন্তান কেবল স্কুল শুরু করেছে। বাংলাদেশের সনাতন শিক্ষা পদ্ধতির তুলনায় সে দেশের স্কুলগুলোর শিক্ষায় কী পার্থক্য-সেটি জানালেন তিনি।

নিউজবাংলাকে মাহমুদুর বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে স্কুল থেকে পড়াশোনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। ফায়ার সার্ভিস নিয়ে একটি বিষয়ে পড়ানোর আগে তারা আগে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে তাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসত।

‘এ ছাড়া তারা শিশুদের বিভিন্ন শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র/কার্টুন দেখানোরও ব্যবস্থা করত স্কুলে। মূল কথা হলো শিশুকে খেলার ছলে শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে সে আনন্দ পাবে, পড়াশোনায় উৎসাহী হবে।’

শিশুদেরকে খেলার ছলে কাজ করালে কী সুফল পাওয়া যায়, তা দেখা গেল প্রায় পাঁচ বছর বয়সী স্বরিৎ ঋতি ভোরের ক্ষেত্রে। সবজি ও মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল প্রায়। তার বাবা-মা চাপ না দিয়ে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যায়। সেখানে যেসব পশু সবজি খায়, সেগুলো দেখিয়ে আনার পর, সে ঘোড়াকে কথা দিয়ে আসে সবজি খাবে। সত্যি সত্যি বাসায় এসে কিছু সবজি খাওয়া শুরু করে।

আবার বইমেলায় সিসিমপুর দেখে এসে হালুমকে (বাঘের চরিত্র, যে কি না প্রচুর মাছ খায়) কথা দিয়ে আসে, সে মাছ ভাজা খাবে। এরপর থেকে মাংস খাওয়ায় আগ্রহ কমে মাছে মন দেয় সে।

এভাবে নানা কৌশলে ভোরকে পড়াশোনা করানো হয়, যাতে সে কখনও চাপ হিসেবে নেয়। তার স্কুলেও শেখানো হয় একই কৌশলে। সেখানে সপ্তাহে চার দিন বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস হয়, এক দিন থাকে শরীর চর্চা। তাতে অনলাইনে শিশুদের নানা কনটেন্ট দেখানোর পাশাপাশি নাচের ব্যবস্থা থাকে।

কিন্তু দেশের সব শিশুকে এভাবে আনন্দের ছলে বা কৌশল করে শেখানো হয়ে উঠে না সেভাবে। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গতানুগতিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করানো হয়। স্কুলের কক্ষগুলোও সেখানে আকর্ষণীয় নয়। এভাবে পড়াশোনাকে শিশুরা চাপ বলে ধরে নিতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রাক-প্রাথমিকে খেলার ছলে, গানের ছলে, নাচের ছলে বাচ্চারা শিখছে। আর মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রমে এ বিষয়টির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা হবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এ আনন্দময় পরিবেশে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনও শিক্ষানীতির এ বিষয়টি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শিশুদের পড়াশোনা অবশ্যই আনন্দদায়ক হতে হবে। তা না হলে হয়তো সে অনীহা সত্ত্বেও পড়াশোনা করবে। কিন্তু তাতে পড়াশোনার যে উদ্দেশ্য তা অপূরণীয়ই থেকে যাবে।’

পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করার গুরুত্ব আরোপ করে এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘বইগুলো এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যেন শিশুরা তা দেখে পড়তে উৎসাহী হয়। একই সঙ্গে শিশুদের আগ্রহের প্রতি খেয়াল রেখে শেখার মাধ্যম নির্বাচন করতে হবে।’

বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দিয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বিদেশে প্লে বা শিশু শ্রেণির শিশুরা পড়াশোনার চেয়ে স্কুলে বেশি এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত থাকে। আর বলা যায় সেখানে পড়াশোনার মাধ্যম এমনভাবে তৈরি, যে কেউ পড়াশোনায় আনন্দ পাবেই।’

একই সুরে কথা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক। তিনি বলেন, ‘শিশুদের উৎসাহ দিতে হবে। প্রয়োজনে চাইল্ড সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। এতে শিশুর মানসিক বিকাশ যেমন হবে, তেমনি পড়াশোনার যে উদ্দেশ্য তাও পূরণ হবে।’

শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম শিশুদের জন্য পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘না হলে শিশুরা পড়াশোনায় আগ্রহী হবে না। এ কথাটা আমরা সরকারকে বারবার বলে আসছি। সম্প্রতি সরকার বলছে নতুন শিক্ষাক্রমে এর বাস্তবায়ন হবে।’

ইতোমধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে সব শ্রেণির পড়াশোনা যেন আনন্দদায়ক হয় সে বিষয় মাথায় রেখে পাঠ্যবই তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে আমরা পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। শুধু পাঠ্যবই নয়, সহশিক্ষায়ও সমান গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’

কী ধরনের পরিবর্তন করা হচ্ছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজগুলো ঝকঝকে তকতকে করে এতে ছবির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে, কার্টুনের ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে শিশুদেরকে বইয়ের বাইরে নানা বিষয় যুক্ত করা যায় বলে মনে করেন এক সন্তানের আইনজীবী নাহিদা খানম। তিনি বলেন, ‘আমার বাচ্চাকে বইমেলায় সিসিমপুর দেখিয়ে আনার পর সে বলে টুকটুকি বই পড়ে, আমিও পড়ব। তাকে রাতে কয়েকদিন বই পড়িয়ে শোনানোর পর ঘুমিয়েছে।’

স্কুলগুলোতে যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর এই ধরনের আয়োজনগুলো করা যেত বা পুতুল নাচ অথবা অন্য কোনো আয়োজন করা যেত, তা ছবি আঁকা অথবা গানের মতো আয়োজনগুলো হলে বাচ্চারা উৎসাহ পেত বলে ধারণা তাদের।

এসব বিষয় ভাবনায় আছে কি না-জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এগুলো করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় সব জায়গায় এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’

প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা বলেন, ‘শিশু শ্রেণিতে খেলার ছলে, গানের ছলে, নাচের ছলে বাচ্চারা শিখছে। আমরা প্রতিনিয়ত বিষয়টি ডেভেলপ করছি।’

দেশে প্রথমে ২০১০ সালে স্বল্প পরিসরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এরপর ২০১৪ সালে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়।

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তর রয়েছে যা ‘শিশু শ্রেণি’ নামে পরিচিত। ইংরেজি মাধ্যম ও কিন্ডারগার্টেনে প্লে, নার্সারি ও কেজি শ্রেণি প্রাক-প্রাথমিক স্তরের মধ্যে পড়ে।

এ বিভাগের আরো খবর