দীর্ঘ অপেক্ষার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ চালু হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর ছাত্রীদের অপেক্ষার অবসান হচ্ছে।ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বুধবার হলটির দ্বারোদ্ঘাটন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক, হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগমসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ‘ছাত্রীদের জন্য একটি হলের যাত্রা শুরুর মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক থেকে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে অগ্রসর হলো। নানা প্রতিকূলতা থাকার পরেও শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানে কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে।
‘অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কর্মসূচি ও করোনা টিকা কর্মসূচির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
হল নির্মাণে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সাবেক উপাচার্য, সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘হলে ছাত্রীরা ডিজিটাল আইডি কার্ড পাঞ্চ করার মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবে। এর মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় আরও একধাপ এগিয়ে গেল।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ছবি: নিউজবাংলা
ইমদাদুল হক আরও বলেন, ‘আমার কোনো নিজস্ব এজেন্ডা নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণায় আরও উন্নত হবে, এটাই হোক আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তাদের জন্য একটি নতুন হল পেল, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আনন্দ আরও বৃদ্ধি পাবে কেরানীগঞ্জের বিশাল নতুন ক্যাম্পাসে। সেখানে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা বিভোর হয়ে রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘হলের দ্বার উন্মোচনের মাধ্যমে মেয়েদের আবাসন সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে। হলের যেখানেই কোনো সমস্যা দেখা যাবে, তা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম লুৎফর রহমানসহ অনেকে।
২০২০ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের প্রায় এক বছর পর আসনের জন্য ছাত্রীদের থেকে আবেদন নেয় হল কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনের প্রায় ১৬ মাস পর ছাত্রীদের সিট বরাদ্দ দেয়া হয়।
হলে যে সুবিধা থাকছে
১৬ তলাবিশিষ্ট বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রীদের জন্য মোট ১৫৬টি কক্ষ, একটি পাঠাগার, একটি ক্যানটিন, একটি ডাইনিং, প্রতি তলায় সাতটি করে শৌচাগার, নয়টি গোসলখানা ও চারটি লিফট আছে।
হলের প্রতি কক্ষে চার ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রত্যেকের জন্য আলাদা খাট, পড়ার টেবিল ও লকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
১৬ তলা হলটির ১৫৬টি কক্ষে চারজন করে ৬২৪ ছাত্রী থাকতে পারবেন।
হলের তৃতীয় থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আর নিচতলা ও দোতলায় রয়েছে লাইব্রেরি, ক্যানটিন ও ডাইনিং।
এ ছাড়া প্রতি তলায় সাতটি করে টয়লেট ও আটটি গোসলখানা রয়েছে। ভবনটিতে চারটি লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা
যেভাবে এলো হল
২০০৯ ও ২০১১ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ছাত্রী হল নির্মাণের ঘোষণা আসে। ২০১১ সালেই শুরু হয় হল প্রকল্পের কাজ। পরে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি লিয়াকত অ্যাভিনিউয়ের ২৩ কাঠা জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ওই সময় ছাত্রী হলের ব্যানার টানিয়ে জায়গাটির দখল নেন।
২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট জায়গাটিতে ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ ছাত্রী হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। ওই দিন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে এক হাজার ছাত্রীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০ তলা ফাউন্ডেশনের দুটি টাওয়ার নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর এ হলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর এক বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হলটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়।
হল নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম দফায় মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন। তৃতীয় দফা ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।
২০১৯ সালেও কাজ শেষ না হলে ২০২০ সালেও অতিরিক্ত সময়ে কাজ চলতে থাকে। শুরুতে এই হলের নির্মাণব্যয় ৩৩ কোটি টাকা ধরা হলেও কাজ শেষ করতে ৩৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান হলটি নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন।