বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওষুধের দোকানের ‘অসুখ’ বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

  •    
  • ১৬ মার্চ, ২০২২ ১৮:৩৭

রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘ডাক্তার নিশ্চিত হয়ে ওষুধ লেখেন, কিন্তু সেই ওষুধ যদি ভেজাল দেয়া হয় সেটা তো ক্রেতা জানেন না। সে কারণে, যে রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন রোগীরা, সে রোগ ভালো হচ্ছে না।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্প্রতি অনুমোদনহীন ফার্মেসি থেকে কেনা নাপা সিরাপ খাওয়ার পর দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা ওষুধের দোকানের উপর নজরদারিতে প্রশাসনের গাফিলতি আছে কি না সে বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা।

রংপুরে অনুমোদনহীন এমন ওষুধের দোকানের সংখ্যা কত, সে হিসাব নেই জেলার ঔষধ প্রশাসনের কাছে। তবে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি রংপুরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় অন্তত ৫ হাজার ফার্মেসি আছে। এর মধ্যে কেবল ২ হাজার তাদের তালিকাভুক্ত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অলি-গলিতে ওষুধের দোকান তো আছেই, মুদির দোকানেও দেদার বিক্রি হচ্ছে ওষুধ। কিছু দোকানে লাইসেন্স দেখা গেলেও সেখানে পাওয়া যায়নি সার্টিফাইড কোনো ফার্মাসিস্টকে। আর কিছু দোকানের লাইসেন্সই নেই।

নিয়ম অনুযায়ী, ওষুধের দোকান দিতে হলে ঔষধ প্রশাসনের ড্রাগ লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি থেকে সি গ্রেডের ফার্মাসিস্টের সার্টিফিকেট নিতে হয় বিক্রেতাকে।

বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি সূত্র জানিয়েছে, সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট হতে হলে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিলের অধীনে ৪ মাসের কোর্স করে পরীক্ষা দিতে হয়।

এই সার্টিফিকেট যিনি পাবেন, তিনি ওষুধের দোকান দিতে পারবেন বা অন্য কোনো ওষুধের দোকানে চাকরি করতে পারবেন।

গত মঙ্গলবার ও বুধবার রংপুর নগরী ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজার থেকে ওষুধ কিনে বিক্রেতারা ছোট ছোট দোকানে সেগুলো বিক্রি করছেন। অনেকে আবার ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ওষুধ কিনে দোকান সাজিয়েছেন।

রংপুরের মহানগরীর ধাপ এলাকা, জিএল রায় রোড সড়কে, কলেজ রোডে একাধিক মুদি দোকানে ওষুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

রংপুরের ধাপ এলাকায় এমনই একটি মুদি দোকানে ওষুধ বিক্রি করা এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি মামার দোকানে ব্যবসা করছি। দোকান রেডি করছি, রেডি হলে আমি লাইসেন্সটা করে নেব।’

ওই এলাকার মো. পরশ নামে আরেক ওষুধ বিক্রেতা জানান, ‘আমাদের লাইসেন্স আছে। ফার্মাসিস্ট আমার বড় ভাই। ফার্মেসিতে ভাই বসেন। প্রেসক্রিপশন ছাড়া আমরা কোনো ওষুধ বিক্রি করি না। সেটা অনেকেই জানে।’

আরেক বিক্রেতা তুহিন ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সবই আছে। সব কাগজ আপডেট। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি করি। মাঝে মাঝে অনেকে গ্যাসের ওষুধ চায়, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, এইচ প্লাস, নাপা চায়। এই কমন ওষুধ বিক্রি করি।’

লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান আছে কি না জানা নেই বলে দাবি করেন ওষুধ প্রশাসনের রংপুর অফিসের সহকারী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেগুলো আছে সেগুলোকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ওষুধ নিয়ে কথা উঠলেই এসব কথা বলা হয়। তবুও আমাদের টিম কাজ করছে।’

বদরগঞ্জের লোহানী পাড়ার একটি দোকানে ওষুধ কিনতে এসেছেন ওসমান আলী। সঙ্গে প্রেসক্রিপশন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ কিনেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ডাক্তার-টাক্টার কম দেখাই। কিছু হইলে ফার্মেসিতে যাই। কী অসুখ সেটা কয়া (বলে) ওষুধ নেই। মাঝে মাঝে ওষুধ কাম করে, মাঝে মাঝে করে না। কখনও এমনি এমনি ভালো হয়া যায়।’

রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকার ক্রেতা মাহফুজার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার দুইদিন ধরে একটু একটু জ্বর। ভাবছি সিজনাল হবে। জ্বর কমছিল না। ফার্মেসিতে জ্বরের কথা বলে ওষুধ নিলাম। মেজর কোনো সমস্যা না হলে আমরা ফার্মেসি থেকেই ওষুধ নেই।’

চিকিৎসকের চেয়ে ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের ওপর এমন নির্ভরতা রোগীর জন্য বিপদজনক হতে পারে বলে মনে করেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জাকির হোসেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ সেবন করা বা ভুলভাবে ওষুধ সেবন করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমরা প্রায়ই শুনছি, চকচকে মোড়কে বাজারে ভেজাল ও নিম্মমানের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে।

‘ডাক্তার নিশ্চিত হয়ে ওষুধ লেখেন, কিন্তু সেই ওষুধ যদি ভেজাল দেয়া হয় সেটা তো ক্রেতা জানেন না। সে কারণে, যে রোগের জন্য ওষুধ খাচ্ছেন রোগীরা সে রোগ ভালো হচ্ছে না। ভেজাল ওষুধের কারণে লিভারে অনেক জটিলতা হতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।’

অনুমোদনহীন ফার্মেসি আর নিম্নমানের ওষুধ বাজারে সয়লাব হওয়ার পেছনে ওষুধ প্রশাসনকে দায়ী করছে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি।

এর রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভেজাল ওষুধে সয়লাব রংপুর। এখানকার তিনটি মার্কেট ওষুধ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভেজাল ওষুধের লাগাম টানা যাবে, কিন্তু সেটা তো কখনও দেখি না। যারা তদারকি করে তাদের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’

স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করে রংপুরভিত্তিক বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।

এর আহ্বায়ক বেলাল আহমেদ বলেন, ‘পাড়ার মোড়ে মোড়ে, পানের দোকানে, মুদির দোকোনে দেদারসে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ওষুধ বিক্রেতারাই ডাক্তারি করে ওষুধ দিচ্ছেন। অথচ এরা অনেকেই শিক্ষিত না। এই বিষয়টি খুবই বিপদের এবং ভয়ঙ্কর। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাকে আরও সচেতন হতে হবে। কঠোর হতে হবে ওষুধ প্রশাসনকেও।’

এ বিভাগের আরো খবর