দেশে এখন দুর্নীতি আঠার মতো লেগে আছে। এটা হচ্ছে দেশে উন্নয়নকাজের জন্যই। একদিকে উন্নয়ন হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এসব দুর্নীতির বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় আক্ষেপ করেন মন্ত্রী।
রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি আয়োজিত ‘পরবর্তী উন্নয়ন যাত্রায় বাংলাদেশ জাপানের অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন কথা বলেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকগুলো নেতিবাচক দিক আছে, যেগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। দেশে দুর্নীতির সমস্যা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটি ক্যানসারের মতো, আমরা জানি, এটা দূর করার চেষ্টা করছি। এটা আঠার মতো।’
দেশে দুর্নীতি প্রতিকারেও আইন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন দেশে প্রচুর উন্নয়নকাজ হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির সুযোগও তৈরি হচ্ছে। কোথাও দুর্নীতি হলে সেখানে আমরা প্রতিকারের ব্যবস্থা করি, এ ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন অনুসারে কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাই এতে অনেক সময় পার হয়।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ইজ অফ ডুইং বিজনেসের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। এ সমস্যাগুলো ডেস্ক লেভেল থেকে শুরু হয়ে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত আছে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজগুলো আরও দ্রুত করার চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে শক্ত নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকার এ সমস্যাগুলো সমাধানে কাজও করছে।’
আমি শুধু একটা বিষয় নিয়েই ভয় পাচ্ছি। সেটা হলো রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা না থাকা। রাজনীতি ও সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে এটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সরকার জাপানকে উচ্চ মর্যাদা দেয়। তাদের সঙ্গে ৫০ বছরের বন্ধুত্ব। এ সম্পর্ক পরের ৫০ বছরে আরও শক্ত করতে চায় সরকার। সাংস্কৃতিক ও মানসিকভাবে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পৃক্ত। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই জাপান দেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে।
‘দেশের সব জায়গায় জাপানি বিনিয়োগের পদচিহ্ন রয়েছে। মাতারবাড়ী, মেট্রোরেল, আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চল সর্বক্ষেত্রেই জাপান কাজ করছে। চলমান এসব কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলবে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সম্ভাবনা দেখছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাড়াতে সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) দিকে যাচ্ছে। জাপানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য করা যায় কি না, বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। যদিও এখানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
‘সিপিডিসহ অন্যান্য গবেষণা সংস্থাগুলো এলডিসি-পরবর্তী রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। ৫০ বছর ধরে আমরা যেসব সুবিধা পাচ্ছিলাম, সেগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমাদের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। তার মধ্যে একটি এমএফএ (মাল্টি ফাইবার এগ্রিমেন্ট)। তা ছাড়া আমাদের উদ্যোক্তারা, আমাদের জনশক্তি রয়েছে। আমাদের একটি শক্তিশালী গার্মেন্টস খাত রয়েছে। ভবিষ্যতের এই খাতসহ সব খাতের উৎপাদনশীলতা আরও বাড়বে।’
এসব উন্নয়ন ও কাজের জন্য রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় গুরুত্ব দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু একটা বিষয় নিয়েই ভয় পাচ্ছি। সেটা হলো রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা না থাকা। রাজনীতি ও সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে এটা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ প্রতি বছর বাড়ছে। গত ১০ বছরে বিনিয়োগ বেড়েছে তিন গুণের বেশি। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনেক জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা করতে চায়।’
অর্থনীতিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে নাওকি বলেন, ‘উন্নত দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। শিল্পকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। জনশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে। তরুণদের উদ্ভাবনী দিকে জোর দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক শাহিদা খাতুন।
বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, বাংলাদেশের জাইকা প্রধানসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক সৈয়দ ইউসুফ।
তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের বড় অংশীদার হতে পারে। জাপানে পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনি জনশক্তি রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে।
সেসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশকে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে বলে মনে করেন তিনি।