‘ভাইয়া দ্যাখ, কত মানুষ তোরে দেখতে আইছে। কত ভাইরা আইছে মোগো বাড়িতে। তুই একটু কতা ক, সবারই ভাই কতা কয়, মোর ভাই কতা কয় না..’
বুক চাপড়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন ইউক্রেনে নিহত হাদিসুর রহমানের ছোট ভাই তরিকুল ইসলাম তারেক।
সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি সাইরেন বাজিয়ে বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে পৌঁছায়।
এ সময় হাদিসুরের ছোট দুই ভাই তারিক ও প্রিন্স, বড় বোন সানজিদা আক্তার অ্যাম্বুলেন্সের কাছে ছুটে যান। তাদের কান্না আর আহাজারিতে গোটা এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
ধীরে ধীরে জড়ো হওয়া শত শত মানুষের ভিড় ঠেলে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি হাদিসুরের ঘরের সামনের আঙিনায় নিয়ে রাখা হয়। সেখানে ছুটে আসেন তা মা রাশিদা বেগম, বাবা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার।
সন্তানের নিথর দেহের আগমণে বাবা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার নির্বাক দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল তাকিয়েছিলেন শূন্যে। মা রাশিদা বেগম অ্যাম্বুলেন্সে ছেলেকে একনজর দেখার চেষ্টা করেছিলেন। স্বজনরা উভয়কে সংযত করে ঘরের ভেতরে নিয়ে যান।
সবার ছোট গোলাম মাওলা প্রিন্স চিৎকার করে কান্না করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। একটু হুঁশ ফিরতেই আর্তনাদ করে বলছিলেন, ‘ও ভাই, একবার একটু মোরে ডাক দে, ও প্রিন্স তুই কই যাও? ভাইরে এত ডাকি, ভাই মোরো সাড়া দেয় না।’
বোন সানজিদা উঠোনে চেয়ার পেতে বসেছিলেন নির্বাক। ভাইয়ের শোকে কান্না করতে করতে ক্লান্ত তিনি।
দুপুরের পর থেকে হাদিসুরের আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যার পর রীতিমত ভিড় জমে যায় নিহত নৌ ইঞ্জিনিয়ার হাদিসের বাড়িতে। তার চাচা ও বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বাড়ির পাশের মাঠে জানাজা শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।