আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণের হাতের নাগালে রাখতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে নিত্যপণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট ও ট্যাক্স তুলে নিতে যাচ্ছি। খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
‘আমরা সারাদেশ ওএমএস কার্যক্রম বৃদ্ধি করব, ন্যায্য মূল্যে যাতে সাধারন মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছাতে পারি। এর পাশাপাশি সাপ্লাইচেইনটা যাতে ঠিক থাকে সরকার সে ব্যবস্থা করবে। কোনো পণ্য যাতে কেউ স্টক করতে না পারে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’
রোববার বিকেল ৪টার দিকে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। রমজান সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।
বৈঠকে সোমবার ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো সংক্রান্ত এসআরও জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ক্যাবিনেট সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে চড়ছে মূল্যস্ফীতির পারদ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫.৬ শতাংশ।
এর অর্থ হলো, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৬০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
আগের মাস আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫.৫৪ শতাংশ। জুলাইয়ে হয়েছিল ৫.৩৬ শতাংশ।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫.৬৪ শতাংশ।
এর পর থেকে প্রতি মাসেই বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।
সেপ্টেম্বরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় খাতেই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫.৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫.৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫.৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে।
অর্থাৎ বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে খানিকটা বেশি ছিল গড় মূল্যস্ফীতি।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, খাদ্যশস্য ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খাদ্যের মূল্য এখন ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক দাঁড়িয়েছে ১৩০। অথচ গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ৯৭.৯ শতাংশ। খাদ্যে ব্যয় বৃদ্ধি অবস্থাপন্ন মানুষের জন্য বড় সমস্যা না হলেও দরিদ্র মানুষের জন্য তা বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ আনুপাতিক হারে দরিদ্র মানুষের খাদ্যব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি।