বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুই শিশুর মৃত্যু: সিরাপ নিয়ে যা বললেন বিশেষজ্ঞরা

  •    
  • ১২ মার্চ, ২০২২ ২২:৪০

নাপা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে এমন কিছু হতে পারে কি না– এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না মেয়াদোত্তীর্ণ হলে মারা যাবে না। অন্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। আমার ধারণা এটা মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয় না। মিটফোর্ড মার্কেটের মধ্যে নকল জিনিস বিক্রি হয়। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। এগুলো কঠোরভাবে না ধরা হলে এমন ঘটনা বাড়তে পারে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। একটি প্যারাসিটাল সিরাপ খাওয়ার পর তারা মারা গেছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। এর পরই জেলায় এই সিরাপ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি। ঘটনার তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা সিভিল সার্জন আলাদা কমিটি গঠন করেছে। সিলগালা করে দেয়া হয়েছে ওষুধ বিক্রেতার দোকান।

তবে ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরাপের ওভার ডোজে মৃত্যুর আশঙ্কা কম। নকল ওষুধের কারণে এটা হয়ে থাকতে পারে।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের শ্রমিক সুজন খান। স্ত্রী লিমা বেগম, সাত বছর বয়সী বড় ছেলে মোহাম্মদ ইয়াসিন খান ও চার বছর বয়সী মুরসালিন খানকে নিয়ে একটি টিনের ঘরে বসবাস করতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘরে অচেতন হয়ে পড়ে সুজন-লিমা দম্পতির দুই সন্তান। খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে যান সুজন। প্রতিবেশীদের সহায়তায় দুই ছেলেকে ভর্তি করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক মো. সোলায়মান ছেলে ইয়াসিন ও মুরসালিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

চিকিৎসক মো. সোলায়মান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি করার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।’

কী কারণে তাদের মৃত্যু এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে না। তবে শিশুদের বাবা জানিয়েছেন, জ্বরে ভুগছিল তার দুই ছেলে। এ জন্য বাড়ির পাশের মা ফার্মেসি থেকে ‘নাপা সিরাপ’ কিনে এনে সন্ধ্যার দিকে তাদের দুই চামচ করে খাওয়ান। এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রথমে বড় ছেলে বমি করা শুরু করে। একপর্যায়ে তারা অচেতন হয়ে পড়ে।”

সন্তানদের মৃত্যুর পর আশুগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন বাবা সুজন খান। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ রহমান জানান, অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সিরাপ খাওয়ানোর কারণেই তার দুই ছেলের মৃত্যু হয়েছে।

থানা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি জানেন জেলা সিভিল সার্জন মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়কে সন্তানহারা বাবার অভিযোগের কথা জানান।

অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুক্রবার বিকেলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়। এদিন সন্ধ্যায় পুরো জেলায় হঠাৎ ওই সিরাপ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি।

বাচ্চারা যেহেতু ট্যাবলেট খায়নি, খেয়েছে সিরাপ। সিরাপ যদি খায়, সিরাপের মধ্যে আমরা প্রোপাইলিন গ্লাইকল একটা সলভেন্ট দিই, ওষুধটা বানানোর জন্য, প্যারাসিটামলটা গুলানোর জন্য, সিরাপ আকারে থাকার জন্য। প্রোপাইলিন গ্লাইকলের বদলে কোনো কোনো কোম্পানি ব্রাইকালিন গ্লাইকল দেয়। এটা একবার করা হয়েছিল এরশাদ সাহেবের আমলে ’৮৬-’৮৭ সালে। সে সময় তদন্ত করে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউছার বলেন, ‘দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আপাতত ওই সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। যদি কোনো শিশুর ক্ষতি হয়- সেই চিন্তা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সিদ্ধান্তের পর রাতে তিন সদস্যের পরিদর্শন কমিটি গঠন করার কথা জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়।

সিভিল সার্জন মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ শনিবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ থেকে কমিটির তদন্ত শুরু হবে। কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তদন্ত প্রতিবেদন দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

সিরাপ খেয়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে খুবই অস্বাভাবিক বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ও ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ফারুক।

তিনি বলেন, ‘নাপার ওভার ডোজ যেটাকে আমরা বলি, যেটা খেয়ে বাচ্চার লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সেটা অনেক বেশি হতে হবে। লিভার নষ্ট হলেও মারা যেতে অনেক সময় লাগবে। নাপার কারণে, অর্থাৎ প্যারাসিটামল থাকে তো নাপার ভেতর, এটা প্যারাসিটামলের কারণে হয়নি।’

কী কারণে হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা যেহেতু ট্যাবলেট খায়নি, খেয়েছে সিরাপ। সিরাপ যদি খায়, সিরাপের মধ্যে আমরা প্রোপাইলিন গ্লাইকল একটা সলভেন্ট দিই, ওষুধটা বানানোর জন্য, প্যারাসিটামলটা গুলানোর জন্য, সিরাপ আকারে থাকার জন্য। প্রোপাইলিন গ্লাইকলের বদলে কোনো কোনো কোম্পানি ব্রাইকালিন গ্লাইকল দেয়। এটা একবার করা হয়েছিল এরশাদ সাহেবের আমলে ’৮৬-’৮৭ সালে। সে সময় তদন্ত করে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিদর্শক কমিটির সদস্যরা ওই শিশুদের বাড়ি যান। ফেরার পথে তারা যান মা ফার্মেসিতে। এ সময় সেটি বন্ধ ছিল। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বিক্রেতা যেন আর ওষুধ বিক্রি করতে না পারেন, সে জন্য সেটি সিলগালা করে দেন কমিটির সদস্যরা।

‘তার পরও এটা নকল হতে পারে। যারা নাপা তৈরি করে, তাদের এটা করার কথা নয়। আমার ধারণা, এটা নকল কোনো কোম্পানি বানিয়েছে, তারা নকল করতে গিয়ে প্রোপাইলিন গ্লাইকল ব্যবহার করেনি, তারা ডাইথেন গ্লাইকল ব্যবহার করেছে। ফলে কিডনি ড্যামেজ হয়ে তারা মারা যেতে পারে।’

নাপা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে এমন কিছু হতে পারে কি না– এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না মেয়াদোত্তীর্ণ হলে মারা যাবে না। অন্য কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। আমার ধারণা এটা মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয় না। মিটফোর্ড মার্কেটের মধ্যে নকল জিনিস বিক্রি হয়। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। এগুলো কঠোরভাবে না ধরা হলে এমন ঘটনা বাড়তে পারে।’

মা ফার্মেসি সিলগালা

যে ফার্মেসি থেকে সিরাপটি সংগ্রহ করেছিলেন সুজন খান, সেই মা ফার্মেসি সিলাগালা করে দিয়েছে জেলা ঔষধ প্রশাসন।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন একরাম উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিদর্শক কমিটির সদস্যরা ওই শিশুদের বাড়ি যান। ফেরার পথে তারা যান মা ফার্মেসিতে। এ সময় সেটি বন্ধ ছিল। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বিক্রেতা যেন আর ওষুধ বিক্রি করতে না পারেন, সে জন্য সেটি সিলগালা করে দেন কমিটির সদস্যরা।’

তিনি জানান, শিশুদের মায়ের কাছে থেকে সিরাপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য ওই নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

ফার্মেসির মালিকের নাম মো. মাইন উদ্দিন। তবে তার বক্তব্য পায়নি নিউজবাংলা। একাধিকবার তার ফোন নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিভাগের আরো খবর