তাঁত মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে ১৯৫১ সালে ‘সোনার বাংলা সমবায় কটন মিলস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে পাকিস্তান সরকারের আমলে দারিদ্র্য বিমোচন আর সামাজিক বৈষম্য কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নিবন্ধনকৃত ‘সোনার বাংলা সমবায় সমিতি’র কার্যক্রম শুরু হয়।
নব্বইয়েরর দশকে কটন মিলের শ্রমিক ও সমবায়কর্মীদের দৃষ্টান্ত ছিল দেশজুড়ে। কিন্তু এখন মাধবদীর এই সমিতিতে চলছে টানাপড়েন। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে এর অস্তিত্ব বিলীনের পথে।
একাধিক স্বার্থান্বেষী মহল
প্রভাবশালীদের প্রভাবে দুই ভাগে বিভক্ত এই সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে নানা অভিযোগ গড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর পর্যন্ত। তবু কোনো সুরাহা হচ্ছে না। একশ্রেণির লোক ফাঁদ পেতে আছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি লুটের জন্য।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক ব্যবসায়ী আশা প্রকাশ করেছেন, এবার সমিতির নেতৃত্বে ‘শুঁটকির নৌকায় বিড়াল চৌকিদার’ না দিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে সমবায় অধিদপ্তর।
বর্তমান অবস্থা
সরেজমিন দেখা গেছে, নরসিংদীতে বৃহত্তর শিল্প শহর মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের অদূরেই ৬ একর ১৮ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠেছে সোনার বাংলা সমবায় কটন মিলস লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি।
এর এক শতাংশ জমির মূল্য কোটি টাকা প্রায়। কিন্তু কটন মিলের অস্তিত্ব নেই। নেই মেশিনারি লোহা-লক্করসহ মিলের স্থাপনা। নেই কোনো শ্রমিকও। পুরোনো একটি পাকা ভবনে সোনার বাংলা সমবায় কটন মিলস লিমিটেডের সাইনবোর্ড লাগানো অফিস কক্ষ। এর সামনে একটি বহুতল ভবন নির্মাণকাজের পিলারগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আর ভেতরের রডগুলোয় মরিচা পড়েছে।
সোনার বাংলার জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ৭১ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ বেশ কয়েক বছর ধরে স্থবির হয়ে আছে
তবে সমিতির অধীনে গড়ে ওঠা শত শত আধাপাকা ঘর নিয়ে সোনার বাংলা মার্কেট এখন জমজমাট। একটি দোকানের সমপরিমাণ জমির লিজ বছরে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা হলেও একটি পক্ষ একেকটি আধাপাকা ঘর নির্মাণের পর তা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
লুটপাট
অনুসন্ধানে জানা যায়, নেতৃত্ব সংকটের ফলে এই মার্কেটের হাজারও ব্যবসায়ী এখন কোণঠাসা। এর আগে ২০১৩ সালে সমিতির কমিটি গঠনে অনিয়ম ও মার্কেট ভেঙে ফেলতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিল। ৬ একর ১৮ শতাংশ জমিতে বহুতল মার্কেট নির্মাণের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের মহড়া চলে।
অভিযোগ আছে, সে সময় নিজেকে সভাপতি দাবি করে এই অনিয়মের নেতৃত্ব দেন জেলা যুবলীগের সভাপতি একরামুল ইসলাম ভূঁইয়া। আর নেপথ্যে থেকে তাকে সহযোগিতা করেন প্রভাবশালীরা।
সমিতির অধীনে গড়ে ওঠা শত শত আধাপাকা ঘর নিয়ে সোনার বাংলা মার্কেট এখন জমজমাট
নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা
সোনার বাংলা সমবায় সমিতি কটন মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আলমাস উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, ২০২২ সালের নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী ৬ মার্চ নির্বাচনের ২৩টি ফরম বিক্রি করা হয়েছে। আর মনোনয়ন জমার শেষ দিন ছিল গত ১০ মার্চ।
এই সমিতির অধীনে সারা দেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৩৬০ জন ভোটার রয়েছেন। এবার হালনাগাদ হয়ে ৮৬৬ জন ভোটার সক্রিয়। এই ভোটারদের নিয়ে ৩ এপ্রিল ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
আলমাস উদ্দিন জানান, প্রার্থীদের যাচাই-বাচাই করে নাম প্রকাশ করবেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
সমিতির সভাপতি ও নরসিংদী আঞ্চলিক সমবায় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রায় সাত মাস আগে এই সমিতির দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। ব্যাপক অনিয়মের কারণে ২০১৬ সালে আগের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছিল। এবার নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
একটি নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে সমবায় সমিতি ও ব্যবসায়ীরা প্রাণ ফিরে পাবেন বলে মনে করেন আশরাফুল ইসলাম।
সমিতির আসন্ন নির্বাচন কমিটির সদস্য মো. জহিরুল হক জানান, নির্বাচনে ২৩টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। এর জমার শেষ দিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত সভাপতি ও সহসভাপতিসহ আটটি পদে মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। এগুলো যাচাই-বাচাই করে প্রার্থীদের নামের তালিকা শুক্রবার বেলা ১১টার পর সমিতির নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু শুক্রবার বিকেলে সমিতির অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তখন পর্যন্ত নোটিশ বোর্ডে কোনো প্রার্থীর নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পরে দ্বিতীয় জহিরুল হক জানান, শনিবার বিকেলে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
এদিকে এবার এই সমিতির নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন সমিতির সাবেক সভাপতি হাজি একরামুল ইসলাম। একরামুল জানান, তফসিল অনুযায়ী সভাপতি পদে মনোনয়ন ফরম তুলতে তিনি গত ৬ মার্চ সমিতির অফিসে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি মাধবদী পৌরসভার মেয়র হাজি মোশাররফ ও তার সঙ্গীদের দ্বারা হেনস্থার শিকার হন। সমিতির প্রধান ফটক আটকে দিয়ে তাকে অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়া হয়। সমবায় ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কারও কাছে একরামুলকে যেতে দেয়নি মেয়র বাহিনী। এ বিষয়ে তিনি জেলা সমবায় ও সংশ্লিষ্টদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ফোন ধরেননি মাধবদী পৌর মেয়র
অভিযোগের বিষয়ে জানতে শনিবার নিউজবাংলা সদর দপ্তর থেকে মাধবদী পৌরসভার মেয়র হাজি মোশাররফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। পরে খুদে বার্তায় পরিচয় দিয়ে ফোন করলে তিনি লাইনটি কেটে দেন।