টানা ১৪ দিন পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে পাওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩ হাজার ৮০১টি। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ২৫৭ জন। শতকরা হিসাবে শনাক্তের হার ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
শনাক্তের এই হার গত ১৭ ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন। সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ১৭ শতাংশ।
করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামে। এরপর তা প্রায় প্রতিদিনই কমেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী করোনার কোনো ঢেউ চলার সময় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ যদি ৫ শতাংশের নিচে থাকে, তাহলে সেই ঢেউ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা যাবে।
করোনা তৃতীয় ঢেউয়ের সময় হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে এক রোগীকে। ফাইল ছবি
বিপরীত দিক দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকার অবস্থায় পর দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে করোনার পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধরা হবে।
গত ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনার নতুন রোগী পাওয়া গেছে ২৫৭ জন, যা চলতি বছরের সর্বনিম্ন। এর চেয়ে কম রোগী পাওয়া যায় গত ১৯ ডিসেম্বর। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় রোগী ছিল ২১১ জন।
এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন ১৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮ রাখ ৫৭ হাজার ৬৪৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৫ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৯ হাজার ১০৫ জন।
তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণ দ্রুত, মৃত্যু ও রোগী কম
করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত হওয়ার পর এই ঢেউ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণে সময় লাগল মোট ৫০ দিন।
এই ঢেউ প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পাশাপাশি এই ঢেউয়ে রোগী কম পাওয়া গেছে, মৃত্যুও কম হয়েছে।
দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। সেই ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
এ ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে প্রায় ১১ মাস।
দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণে আসতে আসতে নমুনা পরীক্ষা হয় ৩৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৩৪ জনের। এর মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৫ জনের।
এদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৮ হাজার ১৬১ জনের।
প্রথম ঢেউয়ে প্রথমে করোনাভাইরাসের ইতালীয় ধরন, এরপর সাউথ আফ্রিকার ধরনই বেশি ছড়ায়। সঙ্গে ছিল ইউরোপীয় আরও কিছু ধরন। প্রথম ঢেউয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী যে করোনা ছড়ায়, সেটি বাংলাদেশে সেভাবে দেখা যায়নি।
বেশি প্রাণঘাতী ছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর। অর্থাৎ দেশে দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে ছয় মাস।
ব্যাপক টিকাদান করোনার তৃতীয় ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসার একটি কারণ হিসেবে বলেন বিশেষজ্ঞরা। ফাইল ছবি
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার দিন দেশে ভাইরাসটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৫৯১ জনের। সেদিন পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৮ জন।
অর্থাৎ প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার দিন থেকে দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার দিন পর্যন্ত ১০ লাখ ২২ হাজার ২১৩ জন রোগী পাওয়া যায়। আর এই সময়ে মৃত্যু হয় ১৯ হাজার ৪৩০ জনের।
অর্থাৎ দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার দিন থেকে তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার দিন পর্যন্ত রোগী পাওয়া যায় ৩ লাখ ৯০ হাজার ২৯৭ জন। আর এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫১৪ জনের।
দুই সপ্তাহের সংক্রমণের হার
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত দুই সপ্তাহ দৈনিক নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ছিল ৫ শতাংশে নিচে।
পরের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ২৮ ফেব্রুয়ারি শনাক্তের হার নামে ৩ শতাংশের নিচে। সেদিন শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
১ মার্চ শনাক্তের হার এই হার ছিল ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২ মার্চ ৩ দশমিক ২২ শতাংশে।
৩ মার্চ শনাক্তের হার মেনে ২ শতাংশের ঘরে প্রবেশ করে। এদিন শতাংশের হার ছিল ২ দশমিক ৯১ শতাংশ। ৪ মার্চ এই হার কিছুটা বেড়ে ৩ দশমিক ২০ শতাংশে ওঠে।
৫ মার্চ ফের শনাক্তের হার ২ শতাংশে নেমে আসে। এদিন শতাংশে হার ছিল ২ দশমিক ১১ শতাংশ। এর পর থেকে আর তা কখনও ৩ শতাংশের ঘরে ওঠেনি।
৬ মার্চ শনাক্তের হার দাঁড়ায় ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। পরের দিন এই হার ছিল ২ দশমিক ১৮ শতাংশ।
৮ মার্চ শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। ৯ মার্চ শতাংশের হার একের ঘরে নামে। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। পরের দিন তা দাঁড়ায় ১ দশমিক ৯১ শতাংশে।