নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চৌমুহনী খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি ধান কিনতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কিনছেন তারা। উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের কারণেই এ অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
জানা গেছে, গত বছর নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মণ ধান এক হাজার আশি টাকা দরে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের সময় নির্ধারিত ছিল।
ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধনের পর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে কৃষকদের কাছে থেকে ধান সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এর আগে প্রকৃত কৃষকদের নাম না রেখে প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতা, ব্যবসায়ী, ইউপি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জোগসাজশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তালিকা করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ তালিকায় অনেকেই কৃষক নন।
এদিকে গুদাম কর্তৃপক্ষ কৃষকের সরবরাহ করা ধানের মান খারাপের অজুহাতে ফেরত দেন। পরে স্থানীয় সরকার দলীয় সিন্ডিকেট কৃষকদের কাছ থেকে ওই ধান ৮৮০-৯০০ টাকা মণ কেনেন ও তা গুদামে সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
হাতিয়া চৌমুহনী খাদ্যগুদাম অফিস সূত্রে জানা যায়, একটি পৌরসভা ও ৯ ইউনিয়নে ৩ হাজার ২০০ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২২৫ জন কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে ৬৬৫ টন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, হাতিয়ায় সরকারদলীয় লোকজনের প্রভাবের কারণে প্রকৃত কৃষক গুদামে এসে ফিরে গেছেন। এ সিন্ডিকেটের কারণে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ব্যাহত হয়েছে, তারা স্থানীয় কৃষকদের ভয়ভীতি ও ভুল বুঝিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ধান কেনার অভিযান শুরু হলে প্রান্তিক কৃষকরা নমুনা নিয়ে চৌমুহনী খাদ্যগুদামে আর্দ্রতা পরীক্ষা করাতে গেলে ধানের মান ভালো না অজুহাতে তাদের ধান ফিরিয়ে দেয়া হয়।
অথচ সেই ধানই কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা গুদামে সরবরাহ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। গুদামে ধান সংগ্রহে মান যাচাইয়ের নামে করা হয়েছিল টালবাহানা ও হয়রানি। এতে কৃষকরা গুদামে ধান সরবরাহ করতে না পেরে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক মো. আমির, কাওছার ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রভাবশালী একটি মহলের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের ধান নানা অজুহাতে গ্রহণ করা হয়নি, আবার প্রভাবশালীদের ধান তারা ঠিকই কিনেছেন।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ওমর ফারুক সেলিম জানান, গুদাম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকবার চেষ্টা করেও তারা ধান গুদামে বিক্রি করতে পারেননি। লেবার সর্দার সিরাজ কয়েল ও তার ছেলেসহ একটি চক্র তৈরি করেছেন।
চৌমুহনী খাদ্যগুদামের ইনচার্জ আব্দুর রহিম মিজি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাইয়ে ধানের মান ভালো না হলে তা কেনা যাবে না। এতে কেউ ধান দিতে না পেরে অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো কৃষক অভিযোগ নিয়ে আসেননি। ধান সংগ্রহে কোনো অনিয়ম হয়নি এখানে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে প্রকৃত কৃষকের তালিকা করা হয়। অনেকে আছেন কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবসা করেন তাদের নাম তালিকায় আছে তবে অন্য কোনো পেশার লোকজনের নাম তালিকায় নেই।’
ধান ক্রয়ের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘তালিকাভুক্ত কৃষক ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে ধান কেনার কোনো সুযোগ নেই, কারণ কৃষকের ব্যাংক হিসাব থাকতে হবে। টাকা সেই হিসাবেই জমা হবে।’