মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে রাজারবাগ দরবার শরিফের পির দিল্লুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে অ্যাসিড দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার বাদীপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উল্যাহ চৌধুরী মামলার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সোমবার ঢাকার অ্যাসিড দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়ার আদালতে একরামুল আহসান কাঞ্চন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মঙ্গলবার আদালত পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়।’
মামলার অন্য সাদ আসামি হলেন আবুল বাসার, মফিজুর রহমান, মেসবাহ উদ্দিন সুমন, নাহিদা আক্তার রত্মা, শাখেরুল কবির ওরফে ইকবাল, ফারুকুর রহমান এবং মফিজুল ইসলাম ওরফে জামাই মফিজ।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আবুল বাসার পির দিল্লুর রহমানের নির্দেশনায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় তার (দিল্লুর রহমানের) দুই সহোদরসহ একরামুল আহসানের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৪ জুন পল্লবী থানায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে একটি মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে ওই বছরের ২৪ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর মামলার বিচারে আসামিরা নির্দোষ মর্মে খালাস পান।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা একরামুল আহসানের পৈতৃক ভিটা/বাড়ি, ফ্যাক্টরি গ্রাস করতে ব্যর্থ হয়ে তার বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে করেছেন। সেই সঙ্গে আপন ভাইদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করাসহ পিরত্বে আনুগত্য স্বীকার না করায় দিল্লুর রহমান ভাইদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ মামলাবাজ দলের সক্রিয় সদস্য। এই আদালতের পর্যবেক্ষণেও তা উঠে এসেছে।
একরামুল আহসান ৪৯টি মামলার মধ্যে ৩৭টি থেকে খালাস পেয়েছেন। এরপর তিনি গত বছরের ৭ জুন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। উচ্চ আদালত রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়।
সিআইডির তদন্তে আসামিরাসহ সিন্ডিকেটের বহু উল্লেখযোগ্য নাম এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গঠিত জেলা জজ সমপর্যায়ের একজনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটির দাখিল করা মিথ্যা মামলাবাজ সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যদের মামলাবাজি, অপকর্ম ও অপরাধের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
উচ্চ আদালত গত বছরের ৫ ডিসেম্বর একরামুল আহসানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে তাকে খালাস/অব্যাহতিসহ মামলার বাদীদের বিরুদ্ধে আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকটসহ আদালতে মামলার নির্দেশনা দেয়।
রাজারবাগ দরবার শরিফের পির মো. দিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে উচ্চ আদালতে যান ভুক্তভোগীরা। এই পিরের বিরুদ্ধে অন্যের সম্পত্তি দখলে গায়েবি মামলা দিয়ে হেনস্তা করার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রাজারবাগ দরবার শরিফের সব সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাদের কোনো জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা তদন্ত করতে বলা হয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে।
প্রশ্ন উঠেছে, রাজধানীর বুকে প্রশাসনের অগোচরে কীভাবে এত ক্ষমতাধর হয়ে উঠলেন দিল্লুর রহমান? তিন দশক ধরে মুরিদ-ভক্তদের নিয়ে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরিফ নামের দরবার শরিফ কীভাবে এত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে?
নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকৌশলীর সন্তান দিল্লুর রহমান বিভিন্ন ব্যক্তির সম্পত্তি দখলের জন্য ‘মামলাবাজ সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলেন ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে। এই সিন্ডিকেটের মামলা থেকে আপন ভাইও রেহাই পাননি। পির দিল্লুরের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উগ্রপন্থায় মদদ দেয়ার অভিযোগও পুরোনো।