মাদারীপুরের কালকিনিতে কৃষকলীগ নেতা মানিক সরদার হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বের হয়ে বাদীকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাদী নিহতের স্ত্রী সীমা খানম জানান, তাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়া হচ্ছে।
নিউজবাংলাকে বুধবার তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মানিক সরদার হত্যার এক মাস পার হয়ে গেছে। এখনও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশ শুরুতে তৎপর থাকলেও এখন তারা কিছুটা চুপ।
‘আসামিরা মামলা হওয়ার পর কয়েকদিন পলাতক ছিল। গত দুই সপ্তাহ ধরে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উচ্চ আদালত থেকে তারা জামিন নিয়ে এখন এলাকায় আমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। মাঝে মধ্যেই ফোন করে মামলা তুলে নিতে বলছে, মিমাংসার কথা বলছে। তাদের কথা না শুনলে পরিবারসহ আমাকে হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে।’
সীমা জানান, তার শাশুড়ি ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়; শ্বশুর অসুস্থ। ছোট দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। তার উপর আসামিদের হুমকি-ধামকিতে তিনি আতঙ্কিত।
তিনি বলেন, ‘মামলার যে অবস্থায় আছে, তাতে আসামিরা ভয়ের বদলে সাহস পাচ্ছে ... আমাদের লোক নাই, টাকাও নাই। সব বিচার এখন আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
‘পুলিশের কাছে গেলে তারা বলে মামলা ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। ডিবির কাছে গেলাম, তারাও কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। শুধু বলে, বিচার হবে। অথচ মামলার এক মাস হয়ে গেল, সবাই সান্তনা ছাড়া আর কিছুই দিচ্ছে না। আমরা যে কি অসহায় অবস্থায় আছি, তা কাউকে বলে বুঝাতে পারব না।’
এ ব্যাপারে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইশতিয়াক আসফাক রাসেল বলেন, ‘আরও দুই সপ্তাহ আগে থেকে মানিক হত্যা মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। তবে আসামিরা যে বাদীকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে তা আমাদের কাছে কেউ জানায়নি। বাদী পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেই হুমকিদাতাকে খুঁজে বের করা হবে।
‘আসামিরা সবাই উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জন্য জামিন নিয়েছেন। তাই পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না।’
কালকিনি উপজেলা কৃষকলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মানিক সরদারকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের পালরদী নদীর পাড়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা।
মানিকের চিৎকারে স্থানীয় গিয়ে তাকে কালকিনি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগ ওঠে আলীনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ওরফে মিলন সরদারের নির্দেশে এই হামলা হয়।
৩৮ বছর বয়সী নিহত মানিক সরদার জেলার কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামের আলমগীর সরদারের ছেলে। উপজেলা কৃষকলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি।
ঘটনায় দুদিন পরে হাফিজুরকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নামে কালকিনি থানায় মামলা করেন সীমা।