ইউক্রেনে সেনা অভিযানের পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্র দেশগুলো অর্থনৈতিক অবরোধের পথ বেছে নিয়েছে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস ও জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বাস্তবতা হলো, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায় সবাই সমভাবে সাড়া দিচ্ছে না। সর্বশেষ জার্মানি জানিয়েছে, তারা রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি বন্ধ করছে না।
দেশটি জানিয়ে দিয়েছে, রুশ জ্বালানি শক্তির ওপর জার্মানিকে নির্ভর করতে হয়। সে জন্য রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করবে না তারা। কারণ রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করলে জার্মানির জীবনযাত্রা থেমে যাবে।
বার্তা সংস্থা আরটি এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক মঙ্গলবার বলেছেন, ‘রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি ছাড়া তার দেশ চলতে পারবে না। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে তারা রাশিয়া থেকে কোনো পণ্য কিনবে না। কিন্তু রুশ জ্বালানির ওপর জার্মানি খুব বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল।’
জার্মান সংবাদপত্র বিল্ডের ভিডিও চ্যানেলকে বেয়ারবক বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি তেল আমদানির এক-তৃতীয়াংশই আসে রাশিয়া থেকে। আমরা রাশিয়া থেকে এই তেল আমদানি সরাসরি বন্ধ করলে কালই জার্মানি স্থবির হয়ে পড়বে।’
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান সংঘর্ষের উল্লেখ করে বেয়ারবক বলেন, ‘আমরা এই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তবে এখন পর্যন্ত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অপ্রতিরোধ্য।’
জ্বালানি তেলের পাশাপাশি জার্মানিকে গ্যাসের জন্যও রাশিয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। দেশটি তার মোট সরবরাহের অর্ধেকেরও বেশি গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করে।
রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি বাড়াতে বহুল আলোচিত রাশিয়া-জার্মানি নর্ড স্ট্রিম-টু গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে তা অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু গত মাসে ক্রেমলিন ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরু করলে জার্মানির জোট সরকার এই পাইপলাইন অনুমোদন বন্ধ করে দেয়।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এর আগে সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইউরোপীয় জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য রাশিয়ান তেল ও গ্যাসের প্রয়োজন রয়েছে।
‘রাশিয়া থেকে আমদানি ছাড়া এই মুহূর্তে বিকল্প কোনো পথে তাপ উৎপাদন, গতিশীলতা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও শিল্পের জন্য ইউরোপের শক্তি সরবরাহ সুরক্ষিত করা যাবে না। জনগণের দৈনন্দিন জীবনের জন্য এটি অপরিহার্য।’
বাস্তবতা হলো, রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জন্য যতটা সহজ, ততটাই কঠিন জার্মানির জন্য।
লন্ডন রুশ জ্বালানি তেল আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর ওয়াশিংটন তেল ও গ্যাস উভয়ই আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। তবে দুটি দেশই তাদের তেল ও গ্যাস আমদানির মাত্র 8 শতাংশ রাশিয়া থেকে নিয়ে থাকে। আর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে কোনো গ্যাস আমদানি করে না।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে জার্মানি তার দায়বদ্ধতাও অস্বীকার করছে না। দেশটি জানিয়েছে, জ্বালানি খাতে রাশিয়ার ওপর তার নির্ভরশীলতা ক্রমাগত কমিয়ে আনবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন মঙ্গলবার বলেছেন, ইইউ বছর শেষের আগেই রাশিয়ান গ্যাসের চাহিদা দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেবে। এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সাল নাগাদ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে।