যাত্রাবাড়ী থানার সামনে দুই সারিতে ১৯টি কার্গো ভ্যান, তেলের ট্রাক, পিকআপ, বাস ফেলে রাখতে দেখা গেল একসঙ্গে। এ কারণে সামনের রাস্তাটা সরু হয়ে তৈরি হতে দেখা গেল দীর্ঘ যানজট।
থানার সামনে ড্রেন থেকে বের হওয়া পানি এই গাড়িগুলোর নিচে জমে আছে। সেখানে মশা কিলবিল করতে দেখা যায় খালি চোখেই।
থানায় ঢুকতে হলে প্রথমে ময়লা পানির সম্মুখীন হতে হবে। এক লাফে পানি পার হয়ে থানার ভেতরে ঢুকতেই হাতের ডানে তাকালে মনে হবে থানা নয়, সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশন। থানার সামনেই ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা।
সেখানে পড়ে আছে ৫টি কার্গো ভ্যান, ৭টি পিকআপ, ২০টির ওপরে প্রাইভেট কার, দুটি বাস, অটোরিকশা, রিকশা, লেগুনাসহ নানা ধরনের গাড়ি। পুরোনো গাড়িগুলো সেই যে কবে রাখা হয়েছে, এরপর যত্নআত্তি বলতে আর কিছু করা হয়নি। অবহেলায় গাছ জন্মে লতাপাতা ছড়িয়ে পড়েছে। গাড়িগুলো চলার শক্তি হারিয়েছে, সেটি বোঝা যায় সহজেই।
কয়েক পা এগোতেই থানার ভবন। ভবনের নিচে ডানপাশে এক শর বেশি মোটরসাইকেল পড়ে আছে। নানা ব্র্যান্ডের দামি কমদামি সব ধরনের বাইক এখানে পাওয়া যাবে, যা ধুলায় মোড়ানো।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় জব্দ করা মোটরসাইকেলের সারি। ছবি: নিউজবাংলা
থানার বাইরের পরিবেশের সঙ্গে ভেতরের পরিবেশেরও মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দোতলায় মূলত থানার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
সেখানে ডিউটি অফিসারের কক্ষের সোফা ভাঙা। ফোম না থাকায় সেখানে বসতে সমস্যা হয়। পাশে সাধারণ মানুষের বসার কক্ষের সোফাও নোংরা, ধুলাবালির ছড়াছড়ি। একটু সামনে এক বন্ধ রুমে পড়ে আছে ভাঙা আসবাব। যার ভেতরে ধুলা-ময়লা ও মাকড়সার জাল। বাথরুমগুলোও নোংরা। থানার ছাদেও রয়েছে ময়লার ঢিবি।
জব্দ করা গাড়ির বিষয়ে কথা হয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে। এর সমাধানের বিষয়ও জানান তিনি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট একটা মিটিং হয়েছে। একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, হোন্ডাগুলো যে মামলা বা জিডির আলামত এগুলো আমরা অকশনের জন্য দেব। তারা এগুলো অকশন করে দেবেন।’
থানার আশপাশ নোংরা থাকার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘থানার পাশেই একটা জনবহুল মাছ বাজার। এটার যে বর্জ্য বা ময়লা, সেটি ড্রেনেজব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়। এ কারণে মেয়র মহোদয় একটা মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন। বড় করে ড্রেনেজব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এই কাজ করার কারণে সাময়িকভাবে এই নোংরা পানি দেখা যাচ্ছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।’
থানার সামনের চা বিক্রেতা জামাল হোসেনও জানান, জমে থাকা এগুলো ড্রেনের পানি।
থানার সামনে দিয়ে চলাচল করা একাধিক বাসচালকের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে কয়কজন জানান, থানার সামনে তিন লেনে গাড়ি রাখা ছিল। এখন দুই লেন দখল করে রাখা হয়েছে। এ কারণে নিয়মিত যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। কিন্তু এর সমাধান হবে না এবং থানার ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে তারা চুপ থাকেন।
থানার সামনে গাড়ি রাখার কারণে যে ভোগান্তি হচ্ছে, সেটা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম স্বীকার করেছেন। তবে গাড়িগুলো ডাম্পিংয়ে ফেলার সুযোগও নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মাদকের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বা কোনো মামলার আলামত হিসেবে গাড়িগুলো জব্দ করা হয়। এই গাড়ির মালিকরা গাড়ি ছাড়ানোর জন্য আবেদন করে না। মালিকপক্ষ আবেদন না করলে কোর্ট কীভাবে গাড়ি খারিজ করবে?’
গাড়িগুলো ডাম্পিং স্টেশনে ফেলার সুযোগ নাই জানিয়ে ওসি মাজহারুল বলেন, ‘দুই দিন পর মালিক এসে বলতে পারে, আমার গাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত বা চুরি হয়েছে। এ রকম বিভিন্ন কারণে গাড়িগুলো থানা ও থানার বাইরে পড়ে থাকে।’
থানা ভবনের তিন তলার একটি কক্ষে বসেন ডেমরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ি যে পরিমাণে জব্দ হয়, সেই তুলনায় থানার জায়গাটা অপ্রতুল। আলামত যেহেতু আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হয়, তাই আদালত আদেশ না দেয়া পর্যন্ত আমাদের এগুলো রাখতে হয়।
‘থানায় যে পরিমাণ গাড়ি থাকার কথা তার থেকে বেশি জব্দ হয়েছে। প্রতি মাসে দুটি খারিজ হয়, পাঁচটি আসে। তাই থানার এই অবস্থা। আমরা চাইলেও গাড়ি দূরে রাখতে পারি না। কারণ আলামত চুরি হয়ে গেলে কোর্টে এর জবাবদিহি করতে হয়।’
থানার ভেতরের নোংরা পরিবেশের বিষয়ে রবিউল বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি পরিবেশ সুন্দর করার জন্য। এখানে ওভাবে ফান্ড নাই। সরকারিভাবে বরাদ্দ দিলেই এর সমাধান হবে। আমাদের থানায় অনেক ধরনের লোকজন আসে। আপনি যেহেতু বলেছেন, আমরা পরিষ্কার রাখব।’