পণ্যমূল্য বৃদ্ধি সারা বিশ্বের সমস্যা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বাড়ে, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।
তবে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিতে দেশে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ‘কিছু পয়সা কামাই করতে চাইছে’ বলেও মনে করেন সরকারপ্রধান। বলেছেন, তাদের মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে।
সোমবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
গণভবন থেকে এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন আওয়ামী লীগপ্রধান। মূল আয়োজন হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে।
১৯৭১ সালের আজকের দিনে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তার সেই ভাষণ স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা ছিল বলেই ধারণা করা হয়।
জাতির পিতার কন্যা তার বক্তব্যে বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়েও কথা বলেন।
‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে বাংলাদেশে প্রভাব পড়ে’
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি এক বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। প্রায় সব নিত্যপণ্য আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি সংস্থা যদিও মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের কম বলছে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের এক জরিপে উঠে এসেছে, এটি এখন ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি মন্দা। তা ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কুফল বাজারে পড়েছে। যে কারণে সব দেশেই জিনিসপত্রের দাম ভীষণভাবে বেড়ে গেছে। দেশেও কিছু জিনিসের দাম বাড়ছে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বাড়ে, সেটার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।’
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সুযোগে দেশে আরও বেশি দামে পণ্য বিক্রির যে অভিযোগ ভোক্তারা করছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও সেটি উঠে এসেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘কিছু লোক তো এখানে আছেই, এই সুযোগে একটু ব্যবসা করে তারা কিছু পয়সা কামাই করতে চায়। তবে সরকার সেখানে মনিটর করার ব্যবস্থা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, মানুষের সার্বিকভাবে আয় বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে, যে কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।’
‘করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি মন্দা। তা ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কুফল বাজারে পড়েছে। যে কারণে সব দেশেই জিনিসপত্রের দাম ভীষণভাবে বেড়ে গেছে।’
দেশে উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও জোর দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রভাব মোকাবিলায় দেশবাসীকে এবং নেতাকর্মীদের বলব, কখনও আমাদের যাতে খাদ্যের অভাব না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেটা নিশ্চিত করুন।
‘যে যা পারবে কিছু উৎপাদন করবে, যার যেখানে যেটুকু জমি আছে, সবাই কিছু কিছু ফসল ফলান। তরিতরকারি যা পারেন কিছু একটা ফলান।
‘নিজের চাহিদাটা নিজে পূরণ করতে চেষ্টা করবেন। নিজের খাদ্যটা নিজে জোগান দিতে চেষ্টা করবেন। যদি আমরা এটা করতে পারি, তাহলে আমাদের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।’
সেই বাংলাদেশ আর নেই
এখন আর বাঙালিকে হাত পাততে হয় না উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘যে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা জাতির জনক বলে গিয়েছিলেন, অন্তত কিছুটা হলেও আমরা তা অর্জন করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
‘যে বাংলাদেশের কথা শুনলে লোকে নাক সিঁটকাত, বাংলাদেশ মানে গরিব, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি কথা শুনতে হতো, সেসব দুর্নাম ঘুচিয়েছি। আজ যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা পারদর্শী, যেকোনো আপদ এলে সেটা মোকাবিলা করতে পারি, যা করোনার সময় প্রমাণ করেছি।
‘অনেক ধনী দেশও বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি। কিন্তু আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিচ্ছি। জনগণের প্রয়োজন মেটাতে পারছি।
‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর আমরা পুষ্টির ব্যবস্থা করেছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসা, বই বিতরণ, সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি। আজকে হতদরিদ্র কর্মহীনদের ঘর দিয়ে যাচ্ছি।
‘যে বাংলাদেশের কথা শুনলে লোকে নাক সিঁটকাত, বাংলাদেশ মানে গরিব, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি কথা শুনতে হতো, সেসব দুর্নাম ঘুচিয়েছি। আজকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা পারদর্শী, যেকোনো আপদ এলে সেটা মোকাবিলা করতে পারি, যা করোনার সময় প্রমাণ করেছি।’
‘১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করেছিলাম, জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম করেছিল। আজকে প্রায় ১০ লাখের মতো মানুষ হবে ইতোমধ্যেই ঘর দিতে সক্ষম হয়েছি। এই ধরনের গৃহহীন হয়তো আর এক লাখ বা দেড় লাখ কিংবা পৌনে দুই লাখ। এসব ঘর করে দিলে একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না বাংলাদেশে।’
বাকি সব ঘর নির্মাণ চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন মাটি কেটে জমি কিনে রেখে দিচ্ছি, একটা বর্ষা যাওয়ার পর সেখানে আবার ঘর তৈরি করা হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এ দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, অশিক্ষিত থাকবে না, রোগে কষ্ট পাবে না, মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলো সেটা আমরা পূরণ করব।’
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এক যুগেরও বেশি সময়ে সরকার কী অর্জন করেছে, সেটিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এই ১৩ বছরের মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন আমরা সমাজে আনতে পেরেছি। এখন আর পুরোনো কাপড় বিদেশ থেকে এনে পরাতে হয় না। এখন আমাদের দেশের মানুষ নিজেরাই সেটা তৈরি করতে পারে এবং পরতেও পারে।
‘মাত্র ১৩ বছর। এর আগে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল বা ২৯ বছর যারা ছিল কী দিয়েছে এ দেশের মানুষকে? কিচ্ছু দেয়নি।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, শ্রম ও জনশক্তি সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজও আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।
সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।