বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৯৪ বছর ধরে ২৪ ঘণ্টাই কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে যে মসজিদে

  •    
  • ৬ মার্চ, ২০২২ ২০:০৫

প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান এখানে। তারা মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি গভীর মনোযোগে কোরআন তেলাওয়াত শোনেন।

গত ৯৪ বছরে কতকিছুই না ঘটে গেছে দেশে। এসেছে দুর্ভিক্ষ-মহামারি-প্রাকৃতিক দুর্যোগ, হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ব্যতীত এসবের কোনো কিছুই এক মুহূর্তের জন্যও থামাতে পারেনি ৭০০ বছরের পুরোনো নওয়াব শাহি মসজিদের কোরআন তেলাওয়াত।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত এই মসজিদ এখন মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু।

মসজিদের খতিব ও ইমাম হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস হুসাইন জানালেন, বিরামহীন কোরআন তেলাওয়াত চালিয়ে নিতে মসজিদটিতে সার্বক্ষণিক নিযুক্ত থাকেন পাঁচজন হাফেজ। পালাক্রমে কোরআন তেলাওয়াত করেন তারা।

সেলজুক তুর্কি বংশের ইসপিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ নামে দুই ভাই ষোড়শ শতকে এক কক্ষবিশিষ্ট এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। পরে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১১৫ বছর আগে ১০ কাঠা জমির ওপর এটি সম্প্রসারণ করে আধুনিক রূপ দেন।

সংস্কারের আগে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৩ দশমিক ৭২ মিটার এবং প্রস্থ ৪ দশমিক ৫৭ মিটার। সংস্কারের মাধ্যমে এটিকে বর্গাকৃতির করা হয়। আর মোগল স্থাপত্য রীতির সঙ্গে মিল রেখে এতে নানা নকশা ও তিনটি বড় গম্বুজ যুক্ত করা হয়।

ছোট-বড় মিলিয়ে মসজিদটিতে মোট গম্বুজের সংখ্যা এখন ৩৪। আর কারুকার্য খচিত বড় মিনার আছে ১০টি। প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছাদ থেকে প্রায় ৩০ ফুট। মাথায় বসানো তামা দিয়ে তৈরি চাঁদ মিনারগুলোর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে।

মসজিদের মেঝে আর দেয়ালে কাচের টুকরো দিয়ে নকশাদার মোজাইক করা। মেঝেতে মার্বেল পাথরে খোদাই করা নিপুণ কারুকার্যও নজর কাড়ে। ভেতরের সব জায়গাতেই চীনামাটির টুকরো দিয়ে মোজাইকের মতো করা হয়েছে ফুলেল নকশা।

১১৫ বছর আগে ১০ কাঠা জমির ওপর মসজিদটির সম্প্রসারণ ও আধুনিক রূপ দেয়া হয়

মসজিদটির ভিত্তিভূমিতে প্রবেশের জন্য চারদিক থেকে চারটি পথ রয়েছে। আর মসজিদের ভেতরে ঢুকতে পূর্ব দিকের বহু খাঁজে চিত্রিত তিনটিসহ উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর মসজিদের পশ্চিমের দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে।

মসজিদে সংরক্ষিত আছে ১৮টি হাঁড়িবাতি। শুরুর দিকে এগুলোয় নারকেল তেলের মাধ্যমে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হতো। একসঙ্গে অন্তত ২০০ মুসল্লি এখন নামাজ আদায় করতে পারেন এই মসজিদে।

জানা যায়, পিরের নির্দেশে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে ১৯২৭ সালে এই মসজিদে সার্বক্ষণিক কোরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী। ১৯২৯ সালে মারা যান তিনি।

মসজিদের পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট ও কবরস্থান। সেখানেই দাফন করা হয়েছে এই নবাব বাহাদুরকে। তার ওয়াকফ করা সম্পদের আয় দিয়েই মসজিদ, পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসা ও ঈদগাহ পরিচালিত হয়।

প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান এখানে। তারা মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি গভীর মনোযোগে কোরআন তেলাওয়াত শোনেন।

ধনবাড়ীর ইউএনও মোহম্মদ আসলাম হোসাইন জানিয়েছেন, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদে সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে তার প্রশাসন। আর মসজিদ এলাকায় পর্যটকরা যেন সহজেই যেতে পারেন, সে বিষয়েও নজর দেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর