চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত অডিও ক্লিপটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই মাস আগেই হাতে পেয়ে হাটহাজারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে গোপনীয়তা রক্ষায় অভিযুক্ত কাউকে তখন শোকজ করা হয়নি।
শনিবার সিন্ডিকেট মিটিংয়ের পর নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান ও উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার।
এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়াও সঙ্গে ছিলেন।
গত ৯ জানুয়ারি এ ঘটনায় হাটহাজারী থানায় জিডি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমাদের অবস্থান ছিল যত বেশি মানুষ জানাজানি করবে, তত বেশি তারা (অভিযুক্তরা) সাবধান হয়ে যাবে। এ জন্য আমরা গোপনে হাটহাজারী থানাকে বিষয়টি অবহিত করি এবং তাদের বলেছি এটি তদন্ত করতে।
‘আমরা জেনেছি হাটহাজারী থানা এ তদন্তে অনেক দূর এগিয়েছে। তারা সময়মতো এটি প্রকাশ করবে। আমরা এ জন্য অপেক্ষা করছি।’
দুই মাস আগে কেন শোকজ করা হয়নি এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘অভিযোগে সংশ্লিষ্টরা যাতে সতর্ক না হতে পারে সে জন্য এমনটা করা হয়েছে। এখন যেহেতু বিষয়টা গণমাধ্যমে চলে এসেছে, তাই আর গোপন রাখার কিছু নেই। সে জন্য এখন আমরা শোকজ করেছি।’
‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে’
উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ‘আমি উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছি সততার সঙ্গে কাজ করার জন্য। আমাদের নিয়োগ বোর্ড সম্পূর্ণ সততা এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে আসছে। এ ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘শুধু একজন ব্যক্তি সুকৌশলে নিয়োগপ্রার্থীদের ফোন করে তা রেকর্ড করেন, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র।
‘এ ঘটনায় আমি বিব্রত। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমাকে বলা হয়েছে কোনো একটা সিন্ডিকেট আমার বিরুদ্ধে কাজ করছে।’
বিব্রত উপ-উপাচার্যও
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি আমাদের জন্য অবশ্যই বিব্রতকর। আমরা এখানে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার জন্য আসিনি। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।
‘আজ সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়োগ বোর্ডটি বাতিল করা হয়েছে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করবে, প্রয়োজনে পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ সবার সহায়তা নেবে।
‘প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি আছে কি না, যদি থাকে তা চিহ্নিত করা হবে। কারা অনিয়ম করেছে তাদের সুষ্ঠুভাবে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং দুদকে যাব। সেই জিডিটাকে মামলায় রূপান্তর করা হবে। ভবিষ্যতে নির্বাচনি বোর্ড বসলে ১০ কর্ম দিবসের আগে প্রার্থীর কাছে চিঠি পাঠানো হবে।’
শনিবার অর্থ লেনদেনসংক্রন্ত অডিও ক্লিপ ফাঁসসহ নানা অনিয়ম নিয়ে তীব্র সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।