রাজধানীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথ মেইনটেন্যান্সের নামে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪-এর আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার আটজন হলেন- আব্দুর রহমান বিশ্বাস, তারেক আজিজ, তাহমিদ উদ্দিন পাঠান, রবিউল হাসান, হাবিবুর রহমান, কামরুল হাসান, সুজন মিয়া ও আব্দুল কাদের।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে রোববার আটক আটজনকে হাজির করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
ব্রিফিংয়ে যা জানাল র্যাব
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আটজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ব্রিফিংয়ে র্যাব মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশের একটি নামী বেসরকারি ব্যাংক তাদের এটিএম বুথের রক্ষণাবেক্ষণ ও টাকা প্রতিস্থাপন ও মেরামতের জন্য একটি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়, কিন্তু ব্যাংকের অডিটে বুথের টাকার হিসাবে ঘাটতি দেখা দিলে ব্যাংকটি ওই এজেন্সির সঙ্গে তাদের সব চুক্তি বাতিল করে। নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে বুথ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দেয়া হয়। এরপরও এ সমস্যার সমাধান না হলে নতুন ওই সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা হয়।
তিনি জানান, মামলায় র্যাবের সহযোগিতা চাওয়া হলে বাহিনীর গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেন। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান নতুন হলেও টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরি দলের কর্মীদের কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রাথমিক সন্দেহ থেকে ওই কর্মীদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা আগের সিকিউরিটি কোম্পানিতেও ছিলেন।
ব্যাংকটি নতুন সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার পর আগের প্রতিষ্ঠানের ১৫ জন নতুন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। আর তারা আগের বুথগুলোতে একই দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। নতুন সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক এই বিষয়ে মামলা করলে তারা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর বুথগুলোর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
যেভাবে অর্থ আত্মসাৎ
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের পর নিজেদের অর্থ আত্মসাতের কৌশল জানায় চক্রটির সদস্যরা। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা বিগত দুই-তিন বছর একসঙ্গে চাকরি করার সুবাদে নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।
আব্দুর রহমান এ সিন্ডিকেটের হোতা। গ্রেপ্তার অন্যরা তার সহযোগী, যারা বুথের কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং এবং মেনটেইন্যান্সের দায়িত্ব পালন করে থাকে। তারা রাজধানীর মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার ২৩১টি এটিএম বুথে টাকা লোড করার দায়িত্বে ছিল। এসব এটিএম বুথে টাকা রাখাসহ সব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের চক্রটিই কাজ করত।
র্যাবের ভাষ্য, চক্রের সদস্যরা মেশিনের লোডিং ট্রেতে টাকা দেয়ার সময় ১৯টি ১ হাজার টাকার নোটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার নোটের পর একটি রাবারের ব্যান্ড রেখে দিত, যেন টাকা তুলতে গেলে মেশিনে জ্যাম সৃষ্টি হয়। এতে করে টাকা তুলতে গেলে কোনো একজন গ্রাহকের ট্রানজেকশনের সময় ওই রাবার ব্যান্ডটি বাধা সৃষ্টি করত। এতে ট্রানজেকশন বাতিল হয়ে যেত। আর গ্রাহকের ট্রানজেকশনের সমপরিমাণ টাকা মেশিনের পার্স বিনে জমা হতো।
এভাবে যতগুলো রাবার লোডিং ট্রেতে দেয়া থাকত, ততগুলো ট্রানজেকশনের টাকা মেশিনের পার্স বিনে জমা হয়ে থাকত। পরবর্তী দিনে চক্রের সদস্যরা ওইসব বুথে টাকা প্রতিস্থাপন করতে গেলে বা মেরামতের জন্য গেলে পার্স বিন থেকে পাওয়া অর্থ সরিয়ে নিত।
এটিএম মেশিনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ট্রানজেকশন বাতিল হলে গ্রাহক শুধু মেসেজ পেতেন। আর শুধু মেশিন থেকে টাকা বের হলে ব্যাংক স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য পেত। তাই এ ক্ষেত্রে মেশিনের পার্স বিনে টাকা জমা হওয়ায় লেনদেনের তথ্য ব্যাংকে পৌঁছাত না। সে জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এ জালিয়াতি সম্পর্কে ব্যাংক বা সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান কিছু অনুমান করতে পারেনি।