রংপুর মহানগরীর ভুরারঘাট এলাকায় ৮০ জন কৃষকের ১০০ একর জমির আলুর গাছ পুড়ে গেছে। ওই কৃষকদের ভাষ্য, আলুগাছ পুড়ে যাওয়ায় তারা প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত বুধবার চাষিরা কৃষিমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ৯ জনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
চাষিদের অভিযোগ, গেটকো ক্রপ হেলথ কোম্পানির ‘জি-সাইন ৫০ ডব্লিউপি’ নামের ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহারের পর আলুর ক্ষেত পুড়ে গেছে।গেটকো ক্রপ হেলথ কোম্পানির রংপুর অঞ্চলের ম্যানেজার হাশেম আলী বলেন, ‘আমাদের ওষুধের কারণে এমনটা হয়েছে তা এখনই বলব না। আমরা নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার ল্যাবে পাঠিয়েছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল এক সপ্তাহের মধ্যে হাতে পাব। রিপোর্ট পেলে এ বিষয়ে বলতে পারব।’শনিবার বিকালে দুর্গাপুর ও সিলিমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ জমির বেড়ে ওঠা আলুগাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। সব গাছ মরে গেছে। ধীরে ধীরে অন্য জমির আলুতেও এই অবস্থা দেখা দিয়েছে। পুঁজি হারিয়ে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার দেখা দিয়েছে।সিলিমপুরের আলু চাষি আকমল হোসেন বলেন, ‘আমরা ৭০-৮০ জন চাষি আলু গাছের পচনরোধে ভুরারঘাট বাজারের ওসমান আলীর মায়ের দোয়া সার ঘর থেকে গেটকো ক্রপ হেলথ কোম্পানির ‘জি-সাইন ৫০ ডব্লিউপি’ কিনে জমিতে দিই। কিছুদিন পর গাছ পুড়ে যাওয়া শুরু করে। আস্তে আস্তে সব গাছ পুড়ি যায়।
‘ওই দোকানে যোগাযোগ শুরু করলে দোকান বন্ধ করে পালায়ে যান ওসমান। শুরুতেই এর সমাধান করিল হয়, তাইলে এতটা ক্ষতি হইত না।’
নগরীর দুর্গাপুর এলাকার আলু চাষি শাখাওয়াত হোসেন মুক্তা বলেন, ‘আমার ২০ একর জমিতে আলুগাছগুলো কেবল লকলক করে উঠছিল। বয়স ৪৫-৫০ দিন হয়েছে। দুবার ওই ওষুধ দেয়ার পর চোখের সামনে মরে গেল। গাছের বয়স ৯০ দিন না হলে আলু তোলা যায় না। সেই হিসাবে সবই শ্যাষ, সোগটাই লস। আমি শিক্ষক মানুষ, না হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগত।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো আবেদনে বলা হয়েছে, গেটকো ক্রপ হেলথ কোম্পানির ওষুধ ব্যবহারে মহানগরীর ভুরারঘাট এলাকায় ৮০ কৃষকের ১০০ একর জমির আলুগাছ পুড়ে গেছে। এতে আমরা প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি। চিঠিতে আমরা ক্ষতিপূরণ চেয়েছি। তাদের কাছে গত বুধবার আবেদন পাঠানো হয়েছে।’
কোলারপাড় এলাকার নাজমুল হোসেন বলেন, ‘এবার ৫০ শতক জমিতে আলু চাষ করি। গেটকোর ওষুধ দেয়ার পর জমির ঘাস এবং আলুগাছ ঝলসে গেছে। কোম্পানি আমাদের ক্ষতিপূরণ না দিলে বৃহত্তর আন্দোলন করব।’ছিলিমপুর এলাকার একাধিক কৃষক বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থাকি এই সর্বনাশ শুরু হয়। আমরা যায়া ওসমানোক কইলে আরও ওষুধ দিবের কইসে। দুইবার যকন দেই তকন পর থাকি কপাল পুড়ি গেইসে। আলুগাছগুলে আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে গেইসে।’তারা বলেন, ‘আলু চাষ করা একটা নেশা। এনজিওর কাছ থাকি কিস্তি নিয়ে আলু গাড়ছি, সাত দিন পর পর কিস্তি দিই। আলু তুলি সেই টাকা শোধ করি। এখন কী হইবে। কাই দিবে এই ক্ষতি।’
রংপুর মহানগরীর ভুরারঘাট এলাকায় ‘ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহারের পর’ বিস্তীর্ণ জমির আলুগাছ পুড়ে গেছে। ছবি: নিউজবাংলা
রংপুর মেট্রোপলিটন কৃষি কর্মকর্তা আমিনা খাতুন বলেন, ‘কৃষকরা আমাদের সঙ্গে কথা বলে ওই ওষুধ ব্যবহার করেননি। অভিযোগ থানায়সহ বিভিন্ন জায়গায় দেয়া হয়েছে। আমরা মাটি সংগ্রহ করেছি, সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠাব। ফল পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষেতে আলুর গাছ, এমনকি ঘাস পর্যন্ত নেই। সব পুড়ে গেছে। কৃষকরা আমাদের অনেক পরে জানিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতিকর কিছু একটা ব্যবহার করা হয়েছে।
‘কৃষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাটি, আলু ও ব্যবহার করা কীটনাশকের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি।’