ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তোলায় ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানকে তিন বছর, দুইজনকে ২ বছর ও ৭ জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরেক ঘটনায় ৮ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় একাডেমিক কাউন্সিলের স্বীদ্ধান্তে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ ডা. চিত্তরঞ্জন দেবনাথ।
তিনি বলেন, ‘দুপুরে তদন্ত কমিটি আমাদের হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন। এরপর কয়েক ঘণ্টা আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারা ওই সময়ের মধ্যে কলেজের কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। আগামীতে এমন অভিযোগ অন্য কারও বিরুদ্ধে উঠলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার ময়মনসিংহ মেডিক্যালের কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী।
তখন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছিলেন, ‘অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ম-৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তার কারণে ওই শিক্ষার্থী কলেজ ছেড়ে চলে গেছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছেন।’
তাৎক্ষণিক বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমসহ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে পাল্টা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ওই ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং কলেজের শিক্ষকসহ হাসপাতালের চিকিৎসকদের মাঝে।
তাদের দাবি, যৌন হয়রানির শিকার ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় কেউ জানেন না। এগুলো শিক্ষকের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। কারও ইশারায় বানোয়াট অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ চিত্ত রঞ্জন দেবনাথের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ম-৫৩ ব্যাচের সব শিক্ষার্থী।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ‘বুধবারের মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের কেউ ম-৫৩ ব্যাচের ছিলেন না। তাদের এ বিষয়ে জানানোও হয়নি।’
এমন দাবির পর মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। অনেকেই মানববন্ধনে অংশ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, সেদিন তাদের জোর করে মানববন্ধনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। না গেলে নানা রকম সমস্যা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। কে তাদের বাধ্য করেছিল তা বলেননি কোনো শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় পরদিন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার গাইনি বিভাগের অধ্যাপক তায়েবা তানজিন মির্জাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হান্নান মিয়া ও শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক লোকমান হোসেন। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত চারদিন কোনো শিক্ষক কলেজে ক্লাস নিতে আসেননি। শিক্ষার্থীরাও আসেননি ক্লাস করতে। ফলে গোটা ক্যাম্পাস ছিল ফাঁকা। শনিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ায় এমন স্বীদ্ধান্ত নিয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল।