নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার এক কৃষকের ফসলি জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
কৃষকের দাবি, তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা ও তার লোকজন। তিনি থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা গেছে, নওগাঁর নিয়ামতপুরে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ছাতমা গ্রামের মৃত নজিবর রহমানের ছেলে শাহিন আলম ও বোনদের পৈতৃক জমিতে গত ২৮ জানুয়ারি ধান চাষের জন্য গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ তার লোকজন নিয়ে শাহিনদের বাধা দেন। একপর্যায়ে শাহিনদের মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সেদিনই শাহিন থানায় মারধর ও জমি দখলের অভিযোগ করেন আবুল কালামের বিরুদ্ধে।
শাহিন জানান, গতকাল জমিতে আবারও বোরো চারা রোপণে গেলে তাদের নামতে দেয়নি আজাদের লোকজন। নামলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
কৃষক শাহিন আলম নিউজবাংলাকে জানান, তাদের পাঁচ বিঘা পৈতৃক জমি রয়েছে। দীর্ঘকাল থেকে সেটিতে তিনি, তার দুই বোন বিউটি ও সুলতানা বেগম চাষাবাদ করে আসছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা সে জমির মধ্যে ১০ কাঠা জমি তার বলে দাবি করে তাদের চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়েছেন।
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ রেকর্ডমূলে দাবি করে আসছেন পাঁচ বিঘা জমির মধ্যে ১০ কাঠা জমি তার মা শাহিনের চাচা মৃত কুবির উদ্দিনের কাছ থেকে ২০ বছর আগে কিনেছিলেন। এখন এসে তিনি দাবি করছেন তার মায়ের কেনা পাঁচ বিঘা জমিতে ১০ কাঠা জমি কম ছিল। সেটা এখন দাবি করে তাদের জমিতে নামতে বাধা দিচ্ছেন।
কৃষক শাহিনের দাবি, আবুল কালাম আজাদের কাছে জমির কোনো বৈধ কাগজপত্রও নেই।
শাহিনের চাচাতো বোন আদরী বেগম বলেন, ‘আমার বাবা কুবির উদ্দিন জীবিত থাকাবস্থায় আবুল কালাম আজাদের মায়ের কাছে পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করেছিলেন। এখন এসে দাবি করছেন তাদের জমি কম দেয়া হয়েছে। যেহেতু এখন দাবি উঠেছে জমি পাবে, যদি পায়ই সে ক্ষেত্রে বসে সুরাহা করা দরকার। কিন্তু আমার চাচাতো ভাই ও বোনদের জমিতে গেলে তারা বাধা দিয়ে মারধর করছেন।’
অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি বা আমার লোকজন পাঠিয়ে শাহিনদের মারধর করিনি। তার চাচার কাছ থেকে আমার মা অনেক বছর আগে পাঁচ বিঘা জমি কিনেছিল। সে জমিতে মাপজোখ করার পর ১০ কাঠার মতো কম হচ্ছে। এখন তো আমাকে জমি বের করে দিতে হবে। যদি রেকর্ড অনুযায়ী শাহিনদের মধ্যে জমি থাকে, তাহলে আমি সে জমি দখলে নেব।’
এত বছর পর কেন জমি কম বলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’২০ বছর আগে জমি কীভাবে মাপজোখ করা হয়েছিল জানা নেই। তখন যৌথ মালিকানার জমি ছিল হয়তো। আর কাশেমদের ভাই ও ভাতিজাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায়। এখন যার জমির মধ্যে আমাদের জমি থাকবে, সেখান থেকেই আমার জমি বুঝে নেব, এর বেশি কিছু আর বলতে চাই না।’
প্রতিবেদককে দেখা করার আমন্ত্রণ জানিয়ে এ সময় তিনি কল কেটে দেন।
নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, শাহিন আলম ও আবুল কালাম আজাদ জমিজমা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। যেহেতু জমিজমার বিষয়, একটু সময় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আর যদি শাহিনকে কেউ হুমকি দিয়ে থাকে, সেটা আমাদের অবগত করলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’