ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রলীগ না করায়’ এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের সাতজন কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম শুক্রবার রাতে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই সাত ছাত্রলীগকর্মী হলেন কলা অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহ, ছাত্রলীগকর্মী পলাশ, হিমেল, তুহিন, মুমিন, সাব্বির ও তানভীর।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে, কিন্তু কেউ যদি ভেবে থাকে আমাদের কারও ইন্ধনে এমন ঘটনা ঘটেছে, এটি ভুল। অপরাধীদের দায় অপরাধীদেরই নিতে হবে। এ জন্য শোকজ করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তারা লিখিতভাবে জবাব দেবে। এরপর পরবর্তী সীদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সবাই ভাই ভাই। একজনের বিপদে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই সবাই নিরাপদে ও শান্তিতে পড়াশোনা করুক।’
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ওয়ালিদ নিহাদ নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধরের শিকার নিহাদ লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
ওয়ালিদ নিহাদ নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনার দিন রাত দেড়টার দিকে তাকে ডেকে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু হলের একাত্তর ব্লকের ৩২৪ নম্বর কক্ষে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পলাশ তাকে ডেকে নেন। রুমটিতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাকে থাপ্পড় মারেন নাট্যকলা বিভাগের হিমেল। এরপর তুহিন, মুমিন, অ্যালেক্স সাব্বির, তানভীরসহ অন্তত ১০ জন তাকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। বুকের ওপর দাঁড়িয়ে মেরেছেন ফোকলোর বিভাগের আবু নাঈম আব্দুল্লাহ। রাত আড়াইটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ না করার কারণে আমাকে ডাকা হয়। পারিবারিক সমস্যার কারণে আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে ছাত্রলীগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার চাইতেও নিষেধ করা হয়।
‘বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে থাকতে পারব না, বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো মরতে হবে- এমন হুমকি দেয়া হয়েছে’, বলেন তিনি।
নিহাদ দাবি করেন, নির্যাতনের একপর্যায়ে তার বুকে রামদা ধরা হয়। তাকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে খালেদা জিয়ার ছবি আপলোড করানো হয়। তখন একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে জোরপূর্বক তাকে দিয়ে বলানো হয়, ‘২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের কুত্তা থাকবে না।’
ঘটনার পরদিন নির্যাতনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানের কাছে।
ওই দিনই চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা বলা হয়।
শিক্ষার্থী নির্যাতনের পরদিন দুপুর থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলে। এ সময় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন।
গত মঙ্গলবার বিকেলেও শতাধিক শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ভাস্কর্যের সামনে বুধবার সন্ধ্যায় মৌন মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনও করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এরপর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। আগামী রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির হাতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।