ইউক্রেনে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলা সমৃদ্ধির ২৮ নাবিক দেশটির সমুদ্রবন্দরের একটি বাংকারে নিরাপদে রয়েছেন। তবে কিছুটা খাদ্যসংকটে পড়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে জাহাজ থেকে অলিভিয়া সমুদ্রবন্দরের বাংকারে তাদের সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থান করা চিফ অফিসার মনসুরুল আমীন খাঁন খাদ্যসংকটের বিষয়টি তার পরিবারকে নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা পৌরসভার উত্তর কাটিয়ার বাসিন্দা মনসুরুল আমীনের স্ত্রী আশকুরা সুলতানা নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার দুপুরে ভয়েস কলে তার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে।
স্বামীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, মুনসুরুল আমীনসহ সবাই বাংকারে নিরাপদে রয়েছেন। হামলায় নিহত ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমানের মরদেহ বিশেষ ব্যবস্থায় বাংকারে রয়েছে। তাদের মনোবল অটুট রয়েছে। খাবার-দাবারের সংকট ছাড়া আর তেমন কোনো সংকট নেই।
মুনসুররুল আমীন অবরুদ্ধ নাবিকদের অতিদ্রুত পোল্যান্ডে সরিয়ে নিতে সরকারের জোর প্রচেষ্টার আবেদন জানিয়েছেন বলে জানান তার স্ত্রী।
মনসুরুল আলম খানের বাবা সেলিম খাঁন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরের বাংকারে তাদের নামানো হয়েছে। বর্তমানে তারা সেখানেই আছে।
সেলিম খান বলেন, ‘ছেলের জন্য বাড়ির সবাই খুব চিন্তিত। ওর মা ও স্ত্রী সারাদিন কান্নাকাটি করছে। তার যমজ ছেলে ১০ বছর বয়সী ফাহিমি ও ফারহান কান্নাকাটি করছে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে জাহাজের চাকরি জীবন শুরু করে মুনসুরুল আলম ওরফে গিনি। সর্বশেষ তিন মাস আগে বাড়িতে এসেছিল সে। সাধারণত ছেলে ৬-৭ মাস পরপর বাড়িতে আসে।’
সাতক্ষীরায় বাড়িতে মুনসুরুল আমীনের বাবা ও সন্তানেরা। ছবি: নিউজবাংলা
সেলিম খান বলেন, ‘ছেলে ইউক্রেনে গিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আটকা পড়বে, এটি কেউ ধারণা করেনি। সেখানে খাবারের সমস্যা হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খাচ্ছে জাহাজে আটকা পড়া বাংলাদেশিরা। নেটওয়ার্ক ও ফোনে চার্জ না থাকায় খুব বেশি যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না।’
সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিপিং অফিস থেকে যোগাযোগ করে আমাদেরকে শান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে আমরা কিছুটা সাহস পাচ্ছি।’
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ এমভি বাংলা সমৃদ্ধি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। জাহাজটির ইউক্রেন থেকে সিরামিকের কাঁচামাল নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পর আর ফিরতে পারেনি।
বন্দরে ২৯ জন নাবিক নিয়ে আটকা পড়েছিল জাহাজটি। এর মধ্যে গত বুধবার সন্ধ্যায় রকেট হামলায় জাহাজে মৃত্যু হয় থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমানের।
পরে বৃহস্পতিবার জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৮ জন নাবিক ও প্রকৌশলীকে সরিয়ে নেয়া হয় নিরাপদ স্থানে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দুতাবাসের কর্মকর্তারা তাদেরকে সরিয়ে নিতে সহযোগিতা করেন।