বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান কখনও দিয়েছে, এমন নয়; বরং এই স্লোগান ও হিন্দু ধর্মের মিশেলে কটাক্ষকর উচ্চারণ করেছে।
এই ধ্বনি এখন জাতীয় স্লোগান। বিএনপি কি এটি ব্যবহার করবে?
কিছুদিন আগ পর্যন্ত দলটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে তাদেরকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে আসা গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় স্লোগান সবারই দেয়া উচিত। তবে বিএনপি এখন তাকে পছন্দ করছে না উল্লেখ করে তিনিও সন্দিহান, দলটি এই স্লোগান দেবে কি না।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তিন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তাদের কেউই স্পষ্ট করে বললেন না ‘জয় বাংলা’য় আপত্তি আছে কি নেই।
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে একটি জাতীয় দিবসও গত চার বছর উপেক্ষা করে আসছে। ২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চকে সরকার জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন করে আসলেও বিএনপি এই দিনে কোনো আয়োজন রাখে না। কোনো বক্তব্য-বিবৃতিও আসেনি। এ জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কটাক্ষেরও শিকার হতে হয়েছে দলটিকে।
সরকার তো অনেক কিছু করছে; অনেক আইন করছে। সবকিছু নিয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া তো জানার দরকার নাই।
গত বুধবার ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সাংবিধানিক পদধারীগণ, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ সব জাতীয় দিবস উদযাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলির পর এবং সভা-সেমিনারে বক্তব্যের শেষে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরাও এই স্লোগান উচ্চারণ করবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক সরকারি সিদ্ধান্তের দুই বছর আগে ২০২০ সালে হাইকোর্টে একটি রায়ে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় আয়োজনে স্লোগান হিসেবে ‘জয় বাংলা’ই ব্যবহার হতো। তবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’-এর ব্যবহার হয়ে আসছে।
বিএনপিও দলীয় স্লোগানই ব্যবহার করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনিতেই আস্থা রেখেছে।
বিএনপি তো আমার ওপর এমনিতেই ক্ষ্যাপা। তবে এটা সবার স্লোগান; সবার দেয়া উচিত।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানই ব্যবহার করা হয়েছে। সে সময়ই কথা ওঠে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি কেন সবাই স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করবে না।
বিএনপির একজন নেত্রী সে সময় টেলিভিশন টক শোতে দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ‘জয় বাংলা’কে দখল করে রেখেছে। পাল্টা বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, অন্য কেউ জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করলে আওয়ামী লীগ কখনও বাধা দিয়েছে?
বিএনপি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার তো অনেক কিছু করছে; অনেক আইন করছে।’
এ বিষয়ে দলে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না। সবকিছু নিয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া তো জানার দরকার নাই।’
দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এ ব্যাপারে যে রাজনৈতিক বক্তব্য সেটা বিএনপি মহাসচিব দেবেন, আমি তো দেব না।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয় নাই। পার্টির সিদ্ধান্ত হলে পরবর্তীতে জানানো হবে।’
বিএনপির জয় বাংলা বলা উচিত: জাফরুল্লাহ
অন্যদিকে রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, ‘জয় বাংলা’ কোনো দলীয় স্লোগান নয়। বিএনপির এই স্লোগান দেয়া উচিত।
বিএনপি এই স্লোগান দেবে বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো আমার ওপর এমনিতেই ক্ষ্যাপা। তবে এটা সবার স্লোগান; সবার দেয়া উচিত।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘জয় বাংলা জাতির স্লোগান, আওয়ামী লীগের একার সম্পত্তি না। জাতীয় স্লোগান হলে তো আমি কোনো আপত্তি দেখি না।’
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য নিজেও এই স্লোগান দিয়েছেন বলে জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।