বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বিরুদ্ধে জাহাজ পরিচালনায় গাফিলতির অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ)। গাফিলতির কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করার দাবি জানিয়েছে তারা।
চট্টগ্রাম নগরীর বারিক বিল্ডিং এলাকায় বিএমএমওএ-এর কার্যালয়ে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
একই সঙ্গে রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান আরিফকে রাষ্ট্রীয় বীর ঘোষণা এবং বাকি নাবিকদের সাহসিকতার সঙ্গে দ্রুত জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়ার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএমএমওএ-এর সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাখাওয়াত হোসেন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি জয়েন্ট ওয়ার কমিটি জায়গাটি যুদ্ধকবলিত অঞ্চল ঘোষণা করে। এরপরেও জেনেবুঝে কেন বিএসসি জাহাজটিকে এই যুদ্ধকবলিত অঞ্চলে ঢুকতে বলল? চার্টার পার্টি বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো জাহাজ কোম্পানি নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধকবলিত ও জলদস্যুপ্রবণ এলাকায় জাহাজ গমনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
‘এ ক্ষেত্রে জাহাজ মালিক বিএসসির পক্ষ থেকে জাহাজটিকে যুদ্ধকবলিত এলাকায় গমনের অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া জাহাজটি যুদ্ধকবলিত এলাকায় আটকে যাওয়ার পরেও নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধারে বিএসসির কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।’
বুধবার রাতে যুদ্ধবিমান থেকে রকেট হামলায় ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ডেকে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
আরও জানানো হয়, জাহাজে রকেট হামলার পর নাবিকরা তাদের উদ্ধারের জন্য অ্যাসোসিয়েশনের কাছে অনুরোধ করেন। পরে ইউক্রেনের বেসরকারি একটি সংস্থার সহায়তার প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার সম্মতি দিলে নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
বিএমএমওএ-এর নেতারা জানান, বর্তমানে নাবিকদের সবাই বাংকারে ভালো আছেন। হাদিসুরের মরদেহ তাদের সঙ্গে আছে। বেসরকারি সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, নাবিকদের পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসে পৌঁছে দেয়া হবে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিএসসির ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ নামের জাহাজটি তুর্কি বন্দর এরেগলি ছেড়ে যায়। ২৯ জন বাংলাদেশি নাবিক নিয়ে দুই দিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দর অলিভিয়ায় পৌঁছায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
শিপিং করপোরেশনের নির্দেশে পণ্য লোড করার পরিকল্পনা বাতিল করে সেখানেই জাহাজটিকে অবস্থান করতে বলা হয়।
বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে যুদ্ধবিমান থেকে রকেট হামলায় জাহাজটির ডেকে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে জাহাজের ক্রু ও নাবিকরা। তবে এ ঘটনায় নিহত হন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ।