মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য। প্রতি মাসেই বাড়ছিল আয়। বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন রপ্তানিকারকরা। প্রত্যাশা করা হচ্ছিল চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকেই আয় ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলার গিয়ে পৌঁছবে।
কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তারা।
আর এ উদ্বেগের কথা জানিয়ে বুধবার এক বিবৃতি দিয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পোশাক শিল্পে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির জন্য একটি সম্ভাবনাময় এবং উদীয়মান বাজার রাশিয়ার উপর বেশ কয়েকটি দেশ ব্যাপক পরিধিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশেষ করে সুইফট আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের বাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।’
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ রাশিয়ায় ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার পোশাক রপ্তানি করেছে। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই (জুলাই-জানুয়ারি) রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক।
বিজিএমইএ মহাসচিব ফয়জুর রহমানের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিজিএমইএ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা আমাদের সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছি, তারা যেন রাশিয়ায় রপ্তানির জন্য যে ক্রেতাদের সাথে কাজ করছেন, তাদের তথ্যাদি, বকেয়া পেমেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিবরণ আমাদের কাছে পাঠায়।’
‘আমরা আমাদের সদস্য ও রপ্তানিকারকদের আরও পরামর্শ দিয়েছি যে, তারা যেন কালবিলম্ব না করে তাদের ক্রেতা ও লিয়েন ব্যাংকগুলোর সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।’
বিজিএমইএ ইতোমধ্যেই বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে তুলে ধরেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘বিষয়টির তীব্রতা বোঝা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষ্যে সরকারও এরই মধ্যে বৈঠক ডেকেছে,’ বলা হয় বিবৃতিতে।
সাড়ে তিন মাসের উত্তেজনার পর সত্যি সত্যি ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এই যুদ্ধ।
এর জবাবে রাশিয়ার ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা।
বাল্টিক অঞ্চলের যে সমুদ্রপথ ধরে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যগুলো এতদিন রপ্তানি হচ্ছিল, সেসব এলাকাতেও ছড়িয়েছে যুদ্ধের উত্তেজনা। ফলে সেসব এলাকার চলমান রপ্তানি আদেশ এবং ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগে পড়ার কথা বলেছেন তৈরি পোশাক খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। প্রতি মাসেই ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি রাশিয়ার বাজারেও আমাদের রপ্তানি বাড়ছিল, কিন্তু এই যুদ্ধ সবকিছু কেমন জানি ওলটপালট করে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ যে কেবল বাজার অস্থিতিশীল করছে তা নয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল-গ্যাসের দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাতে জাহাজ ভাড়া আরও বেড়ে যেতে পারে। এমনিতেই জাহাজ ভাড়া বাড়ায় আমদানি-রপ্তানি খাত ধুঁকছে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ৬৫ কোটি ডলারের মতো এবং অন্যান্য দেশের মাধ্যমে আরও ২০ থেকে ৩০ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রাশিয়ায় রপ্তানি হয়।
‘এই যুদ্ধ আমাদের অনেক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া ইউরোপের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় এই যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের বাজারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। সে কারণেই আমরা বেশ উদ্বিগ্ন। ’