চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের পর প্রতিপক্ষের হামলায় গত বছর মাথায় গুরুতর আঘাত পান মাহাদী জে আকিব।
জখম স্থানে অস্ত্রোপচার হলে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। চিকিৎসকরা তখন মাথার খুলির একটি অংশ তার পেটে চামড়ার নিচে রেখেছিলেন। এরপর কেটে গেছে প্রায় চার মাস। সবকিছু ঠিক থাকলে সামনের সপ্তাহে সেই অংশ তার মাথায় প্রতিস্থাপন করবেন চিকিৎসকরা।
আকিবের মাথার খুলির অংশ কেন অন্য কোথাও সংরক্ষণ না করে এতদিন দেহের ভেতর পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে তার কারণ জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সীমান্ত ওয়াদ্দেদার। তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমাদের মস্তিষ্কের ওপর কোনো প্রেশার এলে এর সম্প্রসারণ হতে পারে। মস্তিষ্ক এমনিতেই খুব কোমল, এটি মাথার ভেতর এক ধরনের তরলে ভেসে থাকে।
‘এখন প্রেশার পড়লে যেহেতু এটির সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এর জন্য স্পেস রাখা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় অনেক রোগীর মাথার খুলির একটি অংশ কেটে স্পেস তৈরি করে দিতে হয়। আকিবের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে।’
পেটে কেন রাখা হয়েছে এ বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘মাথার খুলি তো প্রথমত শক্ত, দ্বিতীয়ত এটি জীবন্ত। পুনরায় যেহেতু এটাকে মাথায় প্রতিস্থাপন করতে হবে, তাই এটিকে তো জীবিত রাখতে হবে। মাথায় স্বাভাবিক অবস্থায় শরীর থেকে যে যে উপাদান এটি পায়, সেসব তো দিতে হবে।
‘এই জন্য শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে চেম্বার তৈরি করে এটিকে রাখা হয়। মাথার খুলির অংশ বড় হওয়ায় শরীরে অন্য যে কোনো জায়গার চেয়ে পেটে রাখা সহজ। তাই পেটে রাখা হয়।’
খুলি প্রতিস্থাপনের জন্য আহত আকিবকে রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিভন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়ে আগামী সপ্তাহে তার মাথার খুলির অংশ প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এখনও দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি।
গত বছরের ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে আহত হন তিনজন। তাদের মধ্যে আকিবের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। দীর্ঘ ১৮ দিন আইসিইউতে থাকার পর ১৮ নভেম্বর তাকে কুমিল্লার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসার সময় আকিবের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই ছবিতে দেখা যায়, তার মাথাজুড়ে সাদা ব্যান্ডেজ। এতে লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’।