যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে অভিনেত্রী শাহ হুমায়রা হোসেন সুবহার করা মামলায় গায়ক ইলিয়াস হোসাইনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করা হয়েছে।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াতের আদালতে বুধবার ইলিয়াসের জামিন শুনানির তারিখ ছিল। এ দিন বাদী সুবহা আদালতে হাজির হলেও ইলিয়াস অসুস্থ থাকায় হাজির হতে পারেননি।
ইলিয়াসের আইনজীবী তখন সময় আবেদন করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মাহবুবুর রহমান আসামি ইলিয়াসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।
এরপর সুবহা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আদালতে কথা বলতে অনুমতি চান। তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি অনেক আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন, তারা তো কথা বলছেন।’
এরপর আদালত ইলিয়াসের সময় আবেদন গ্রহণ করে আগামী ২২ মার্চ জামিন শুনানির তারিখ দেয়।
বিচারক বলেন, ‘যেহেতু তিনি (ইলিয়াস) উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন এবং আমার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, আমি শুনানির জন্য আজ তারিখ রেখেছিলাম। তাই শেষবারের মতো তাকে সময় দেয়া হলো। ২২ মার্চ বাদী ও আসামির উপস্থিতিতে শুনানি হবে।’
এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন পান ইলিয়াস। জামিনের মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত বাদীর উপস্থিতিতে জামিন শুনানির জন্য ২ মার্চ তারিখ দেয়।
সুবহার আরেক আইনজীবী নাসিদুস জামান নিশান নিউজবাংলাকে আসামি পক্ষের সময়ের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইশতিয়াক আলমও একই তথ্য জানান।
গত ৩ জানুয়ারি রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন সুবহা।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছর সেপ্টেম্বরে ইলিয়াসের সঙ্গে সুবহার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করেন। বিয়ের সময় সুবহার পরিবারের পক্ষ থেকে ইলিয়াসের চাহিদা মোতাবেক ১২ লাখ টাকার রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়িসহ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার পণ্য দেয়া হয়। কিন্তু ইলিয়াস সন্তুষ্ট হয়নি।
পরে সুবহা জানতে পারেন, ইলিয়াস আগে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং অসংখ্য প্রেমের সম্পর্ক চলমান। এরই মধ্যে ইলিয়াস সুবহার কাছে ফ্ল্যাট কেনা বাবদ ৫০ লাখ এবং গাড়ির জন্য আরও ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। গত ৯ ডিসেম্বর ইউটিউব চ্যানেল কেনার জন্য সুবহার মায়ের কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন ইলিয়াস। তাকে আড়াই লাখ টাকা দেয় সুবহার পরিবার।
পরে গত ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার জন্য ৮০ লাখ টাকার জন্য চাপ দেন ইলিয়াস। এ নিয়ে তাদের ঝগড়া হয়। এর জের ধরে রাত ৮টার দিকে সুবহাকে শারীরিক নির্যাতন করেন ইলিয়াস।
পরদিন আবারও ৮০ লাখ টাকা যৌতুক চান তিনি। এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইলিয়াস সুবহাকে মারধর এবং মাথা দেয়ালের সঙ্গে ঠুকে জখম করেন। পরে ইলিয়াস সুবহাকে ব্যথার ওষুধের কথা বলে অন্য ওষুধ খাওয়ান, সুবহা অজ্ঞান হয়ে যান। এ সুযোগে ইলিয়াস আলমারিতে থাকা ২০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার এবং ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যান। সুবহার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।