সেশনজট সমস্যার সমাধানসহ কয়েক দফা দাবি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের জন্য যে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে তাকে অযৌক্তিক বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিল। এখন দেশ স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে আসছে, তাই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনের আগে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিকের ক্লাসও আজ শুরু হয়েছে, মাধ্যমিকের ক্লাস আগেই শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী এইচএসসি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলব, তারা যাতে শুরুর দিকের ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণে কিছু অ্যাসেসমেন্ট করিয়ে নেয়।’
আগের শিক্ষণ ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘হয়তো এক শিক্ষাবর্ষে সব ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়। আশা করছি, এই শিক্ষাবর্ষ এবং আগামী শিক্ষাবর্ষ মিলিয়ে যেখানে যত ঘাটতি সব পূরণ করা সম্ভব হবে।’
অনেক দিন আগে থেকেই সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তার মধ্যে অন্যতম সাত কলেজের জন্য আলাদা একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। সেটা করার বিষয়ে সরকার কিছু ভাবছে কি না- এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক যে সাত কলেজে আগে কিছু সমস্যা ছিল, যেটা খুবই স্বাভাবিক। যখন থেকে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়, তখন থেকেই তাদের মানের ভিন্নতা আসে, তাদের পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম ভিন্ন মানে করতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষার্থীর চেয়ে কয়েক গুণ শিক্ষার্থী এই সাত কলেজে। এটা দুই দিক থেকে সমন্বয়ের ব্যাপার রয়েছে।’
দীপু মনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে তারা এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠছে। আমরাও সাত কলেজের সঙ্গে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা সমন্বয় করছে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে আছি। সে কারণেই সেশনজট এখন অনেকটাই কমে এসেছে। আশা করি, সেশনজট সমস্যা আর থাকবে না। পরীক্ষার ফলগুলো তারা যথাসময়ে দিতে পারবে। সেভাবেই তারা উদ্যোগ নিচ্ছে।’
তাদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার অধিভুক্ত কলেজগুলোকে যেভাবে দেখা দরকার, সাত কলেজকেও সেভাবেই দেখবে। কাজেই আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করা এটা কোনো চিকিৎসা কিংবা সমাধান নয়। এটাকে এই মুহূর্তে আমি কোনো যৌক্তিক দাবি বলে ভাবছি না। সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে উন্নত হচ্ছে, এটিই আমাদের জন্য যথার্থ মনে করি।’
পাঠ্যপুস্তক বিতরণের সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি বইগুলো ভালো হবে। চেষ্টা করা হয়েছে বইগুলো ভুলত্রুটি মুক্ত রাখতে। একবারেই তো ভুলের ঊর্ধ্বে নই আমরা। আমাদের রিভিউ কমিটি আছে, তারা রিভিউ করবে। আগামী দিনে আমাদের পাঠ্যপুস্তক আরও ভালো হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা এমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই, যেখানে তারা আনন্দের সঙ্গে শিখবে। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করবে, মূল্যবোধ নিয়ে বড় হবে। সেই জায়গা থেকে বইয়ের বড় ভূমিকা আছে।’
এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এ সময় এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।