বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতেই চলছে ভারী যান

  •    
  • ২ মার্চ, ২০২২ ১০:৫১

নিকলী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আব্দুল গণি বলেন, ‘সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে সেতুর পাশে ফলকে নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ডও দেয়া হয়েছে। যেকোনো সময় সেতুতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায় নরসুন্দা নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ মহরকোনা, দামপাড়া ও কামালপুর সংযোগ সেতু। সেতুর বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে, ভেঙে পড়েছে দুই পাশের রেলিং। পিলারের আস্তর খসে ভেতরের রডও বের হয়ে এসেছে কোথাও কোথাও।

দুটি প্রাইভেট কার একসঙ্গে গেলেই কেঁপে ওঠে সেতু। ওপর দিয়ে ট্রাক্টর গেলে হেঁটে যাওয়া মানুষও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দুর্ঘটনার আশঙ্কায়।

এসব কারণে সেতুর পাশের ফলকে বড় করে লিখে দেয়া হয়েছে এর ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রাক বা ট্রাক্টর চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ইটবোঝাই ট্রাক্টর প্রতিদিন চলছে সেতুর ওপর দিয়ে। বাধা দেয়ায় পুলিশি হয়রানির শিকারও হয়েছেন স্থানীয় এক যুবক। পরে থানা থেকে মুচালেখা দিয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে।

তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সরকারি কাজে বাধ্য হয়ে সেতুটি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান একজন শিল্পী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যানার, সাইনবোর্ড ও দেয়াল লিখনের কাজ করেন তিনি। নিকলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল গণির নির্দেশে সেতুটির পাশের ফলকে নিষেধাজ্ঞা লিখে দিয়েছেন তিনি।

নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমবার লেখার পরদিনই কে বা কারা ফলকের লেখা মুছে ফেলে। পরদিন তার নির্দেশে আবারও লিখে দিয়ে আসি।

‘গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে ইটবোঝাই ট্রাক পার হতে দেখে বাধা দিলে পুলিশ এসে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে আমাকে থানায় নিয়ে যায়। পরে মুচালেকা দিয়ে বাড়ি ফিরেছি।’

সেতুটি সরু হওয়ায় একসঙ্গে দুটি অটোরিকশা যাতায়াত করতে পারে না। ছবি: নিউজবাংলা

হাবিবুরকে আটক প্রসঙ্গে স্থানীয় থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল সরকার বলেন, ‘তিনি সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন। তাই তাকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয়া হয়।’

হাবিবুর সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন নাকি সরকারকে সহযোগিতা করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। ওসি স্যার অথবা ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’

নিকলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরুল হাসানের ইটভাটা থেকে ইট সরবরাহে এ সেতুটিই ব্যবহার করছেন তারা।

এ বিষয়ে ইমরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চলছে আলিয়াপাড়ায়৷ শুকনা মৌসুমে সেখানে যেতে এই সেতু ছাড়া উপায় নেই। তাই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এটি ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, ‘নিকলী সদরের সঙ্গে দামপাড়া ও সিংপুর ইউনিয়নের যোগাযোগের মাধ্যম এই সেতু। এর ওপর দিয়ে সাধারণ মানুষ একটি ট্রলি নিলেও নিষেধাজ্ঞায় পড়ে, অথচ উপজেলা প্রশাসন তাদের প্রয়োজনে ইটবোঝাই ট্রাক্টর নিলেও সমস্যা নেই।’

জানা গেছে, সেতুটি সরু (১.৯৫ মিটার) হওয়ায় একসঙ্গে দুটি অটোরিকশা যাতায়াত করতে পারে না। এ কারণে সেতুর ওপর এক হাতে লাল আর অন্য হাতে সবুজ কাপড় উড়িয়ে সংকেত দেন ৭০ বছরের আছির উদ্দিন। তার দেয়া সংকেতের ওপর নির্ভর করেই সেতুতে ওঠে অটোরিকশা।

আছির উদ্দিনের সংকেতের ওপর নির্ভর করেই সেতুর ওপর চলে অটোরিকশা। ছবি: নিউজবাংলা

আছির উদ্দিন বলেন, ‘সবাই আমার সংকেত মানে শুধু ইটের ট্রাক্টর ছাড়া।’ এটি কেন তার নির্দেশ মানে না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আরে এইডে তো সরহারি (সরকারি)। এইডে আটকানির ক্ষমতা আমার নাই। এইডে যেইবালা বিরিজডেথ (ব্রিজে) উডে এইবালা বিরিজডেও কাঁপে (কেঁপে), আমারও ডর করে।’

এ বিষয়ে নিকলী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আব্দুল গণি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে সেতুর পাশের ফলকে নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ডও দেয়া হয়েছে। যেকোনো সময় সেতুতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ট্রাক্টরে একদম সামান্য পরিমাণ, যতটুকু না নিলেই না ততটুকু ইট পরিবহনের কথা বলেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ তো শেষ করতেই হবে। এটা স্থগিত রাখার কোনো সুযোগ নেই।’

হাবিবুর রহমানকে কেন পুলিশ আটক করেছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি সরকারি কাজে বাধা দিয়েছিলেন। তাকে আটকে আমাদের অবস্থান সঠিক ছিল বলেই মনে করি।’

এ বিভাগের আরো খবর