বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২০০ কিমি হেঁটে কিয়েভে নাটোরের নূরুল

  •    
  • ২ মার্চ, ২০২২ ০১:০৬

নূরুল ইসলাম কাজ করতেন ইউক্রেনের রাজধানী থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের এক খামারে। রাশিয়ার হামলা শুরুর পর কর্মস্থল থেকে হেঁটে তিন দিনে পৌঁছেছেন কিয়েভে। উদ্দেশ্য, এখান থেকে ট্রেনে পোল্যান্ড সীমান্তে যাওয়া।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে ২০০ কিলোমিটারের বেশি দূরের গ্রাম শেরবানি হিফচকো। সেখানে একটি ভেড়ার খামারে কাজ করেন বাংলাদেশের নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আবদুল জব্বারের ছেলে নূরুল ইসলাম। বছর তিনেক আগে ইউক্রেনে যান তিনি।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর নূরুল ইসলাম নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যুদ্ধকবলিত দেশটিতে রাশিয়ার গোলাবর্ষণ শুরু হয়। চোখের সামনে বড় বড় দালান ধসে পড়তে থাকে। মুহুর্মুহু বোমার শব্দে কানে তালা লাগার মতো অবস্থা।

নূরুল ইসলাম ইউক্রেন ছাড়তে মনস্থির করেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান খামারের মালিক। প্রথমে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। তাতে রাজি না হলে মালিক রেগে যান। পাসপোর্ট আটকে রাখেন। এ অবস্থায় জীবন বাঁচানোর তাগিদে পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়েই বেরিয়ে পড়েন নূরুল।

শেরবানি হিফচকো গ্রামের পাশের সড়কে এসে দাঁড়ান। গায়ে মোটা শীতের পোশাক। হাতে কাপড়ের ব্যাগ। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ। কিছু জরুরি গাড়ি চলছে। এককভাবে গাড়ি ভাড়া করার মতো টাকাও সঙ্গে নেই। অনন্যোপায় হয়ে হাঁটতে শুরু করেন। প্রায় তিন দিনে ২০০ কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেছেন। ঘুমানোর সুযোগ নেই। আধপেটা খেয়ে কেবলই হেঁটে চলা। কারো দিকে কেউ তাকানোর সময় নেই। সবাই ছুটছেন পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে।

মোবাইল ফোনে নূরুল জানান, তখন মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটা। ইউক্রেনে আরো ৪ ঘণ্টা এগিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার মতো। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বাগজালনা রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে তিনি কথা বলছিলেন। আর অপেক্ষা করছিলেন ট্রেনের জন্য। উদ্দেশ্য, পোল্যান্ডে যাওয়া। তিনি শুনেছেন যে পোল্যান্ড সীমান্তে বাংলাদেশ দূতাবাসের লোকজন বাংলাদেশিদের শনাক্ত করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিচ্ছে। তার পাসপোর্ট নেই। তাকেও যেন গ্রহণ করা হয় সে বিষয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

নূরুল জানান, যুদ্ধের প্রথম দিন তার কর্মক্ষেত্র এলাকায় বোমা হামলায় ১৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বহু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। চারদিকে হাহাকার। সবাই ছুটছে সীমান্তের দিকে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। যে যেভাবে পারছে ট্রেনে চেপে সীমান্তে যাচ্ছে।

ক্লান্ত-শ্রান্ত কণ্ঠে নূরুল জানান, বছর তিনেক আগে ইউক্রেন আসতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। প্রথম বছর জেল খেটেছেন। পরের বছর খাওয়ার বিনিময়ে কাজ করেছেন। তৃতীয় বছর থেকে কাজ পেয়েছেন। তবে সেই কাজও খুব কষ্টদায়ক। দিনে ২০ ঘণ্টার মতো কাজ। বেতন মাত্র ২৫-৩০ হাজার টাকা।

দেশে পরিবারের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হয়। বাবা বেঁচে নেই। মা তাছলিমা খাতুন, স্ত্রী ডলি খাতুন, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে- সবাই তাকে নিয়ে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় আছেন। যে টাকা ঋণ করে বিদেশে এসেছেন তাও শোধ হয়নি। সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কী করবেন জানেন না। সুখের আশায় ছুটে চলা নূরুল এখন ছুটছেন জীবন বাঁচাতে।

এ বিভাগের আরো খবর