প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে কৃষক রাসায়নিক সারের জন্য ব্যয় করেন কমপক্ষে দুই হাজার টাকা। অথচ মাত্র একটি গরুর গোবর ও মূত্র থেকেই তিনি ৯০ বিঘা জমি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার তৈরি করতে পারেন।
গোবর ও গো-মূত্র দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে সার তৈরির একটি মডেল প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। নতুন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিএডিসি তা ছড়িয়ে দিতে চায় সারাদেশে।
রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সোমবার শুরু হয়েছে সবজি মেলা। চলবে বুধবার পর্যন্ত। সেখানেই কৃষি ও চাষাবাদের নানা প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
খামারবাড়ির সবজি মেলায় পুষ্টি বাগানের মডেল। ছবি: নিউজবাংলা
দেশি গরুর মাধ্যমে সার উৎপাদনে ‘জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিং’ নামে একটি মডেল প্রচার করছে বিএডিসি। কাঁচা গোবরকে তিন দিনের ঘরোয়া প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎকৃষ্ট মানের সার তৈরি হবে এ পদ্ধতিতে। একটি দেশি গরু থেকে পাওয়া গোবর ও মূত্র থেকে ৯০ বিঘা জমি চাষের সার তৈরি করা যাবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
বিএডিসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক রহমত আরা বলেন, ‘সার তৈরির এই পদ্ধতিটি কৃষকের জন্য খুবই লাভজনক। পাশাপাশি মানুষ রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত সবজি খেতে পারবে।
‘মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে দিন দিন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ফলে বাড়তি সার প্রয়োগ করতে গিয়ে কৃষকের খরচ বাড়ছে। নতুন পদ্ধতিতে কৃষকের ঘরে থাকা দেশি গরুর গোবর ও মূত্র থেকেই সারা বছর জমি চাষের জন্য সার তৈরি সম্ভব হবে।’
বিএডিসি বলছে, দেশি গরু দেখতে ছোট, গায়ে মাংস খুব কম, বিক্রি হয় কম দামে। এজন্য অনেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের গরু পালনের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু সার হিসেবে দেশি গরুর গোবর সর্বোৎকৃষ্ট। কারণ একটি দেশি গরুর ১ গ্রাম পরিমাণ গোবরে প্রায় ৫ কোটি উপকারী অণুজীব থাকে। বিদেশি গরুর একই পরিমাণ গোবরে থাকে মাত্র ৭০ হাজার অণুজীব। এজন্যই দেশি গরুর গোবরকে এই মডেলে ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশি গরুর মাধ্যমে সার উৎপাদনে ‘জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিং’ নামে একটি মডেল প্রচার করছে বিএডিসি। ছবি: নিউজবাংলা
যেভাবে তৈরি হবে সার
বিশেষ পদ্ধতিতে জৈব সার তৈরিতে প্রাথমিক সরঞ্জামের জন্য ব্যয় হবে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা। এক ইউনিট সার তৈরি করতে ১০ কেজি গোবর, ৩০০ লিটার পানি, ১ কেজি বেসন ও দেড় কেজি চিটাগুড় লাগবে। এর সঙ্গে লাগবে রাসায়নিক দেয়া হয়নি এমন এক মুঠো মাটি।
মিশ্রণটি একটি বড় ড্রাম বা পাত্রে ৭২ ঘণ্টা রেখে দিনে তিনবার ঘড়ির কাঁটার দিকে নেড়ে দিতে হবে। গাজন পদ্ধতিতে তিনদিনের মধ্যেই তা জমিতে ব্যবহারের উপযোগী হবে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, সারের মিশ্রণ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরালে অণুজীবগুলো মারা যাবে, তা করা যাবে না। এই সার ব্যবহারে জমিতে অণুজীবের সংখ্যা বাড়বে। ফলে জমিতে যে কেঁচো আছে সেগুলো খাবার পাবে। বাড়বে মাটির উর্বরতা।
জানা গেছে, সার তৈরির অভিনব এ পদ্ধতি ভারতে সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। এর আবিষ্কারক সুভাষ পাল ইতিমধ্যে ভারত সরকারের সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কার পেয়েছেন। মূলত প্রতিবেশি দেশের কৃষি মডেলটি নিয়ে বিএডিসি তা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।
খামারবাড়ির সবজি মেলায় টমেটো ও কপি চাষের মডেল। ছবি: নিউজবাংলা
বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণের বেশ কয়েকটি পদ্ধতি মেলায় তুলে ধরছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বিভিন্ন ফসলের ঘরোয়া সংরক্ষণ পদ্ধতিও মেলায় তুলে ধরা হয়েছে।