শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেকর্ড রুমে পর্চার আবেদনপত্রে নকল কোর্ট ফি স্ট্যাম্প পাওয়া গেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেকর্ড রুমের নথিপত্র বের করে দেখেন, জাল কোর্ট ফি স্ট্যাম্পের ছড়াছড়ি।
এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় করা মামলায় এক ভেন্ডরকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রেকর্ড রুম শাখার ডেপুটি কালেক্টর সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে মোনায়েম খান ও অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার লিপির পর্চার আবেদনপত্রে জাল কোর্ট ফি স্ট্যাম্প পাওয়া যায়। মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে রেকর্ড রুম শাখার ডেপুটি কালেক্টর সাইফুল ইসলাম তা মেশিনে পরীক্ষা করেন। তাতে দেখা যায়, দুটি আবেদনপত্রের কোর্ট ফি স্ট্যাম্পই জাল। এ সময় তিনি আরও কিছু আবেদনপত্র মেশিনে পরীক্ষা করেন। এর মধ্যে নকল এবং আসল দুই ধরনের কোর্ট ফি ধরা পড়ে। এমন অর্ধশতাধিক পর্চার আবেদনপত্রে নকল কোর্ট ফি স্ট্যাম্প ধরা পড়ে।
পরে আবেদনকারী মোনায়েম খান ও অ্যাডভোকেট লিপিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়।
শরীয়তপুর জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট লিপি জানান, পাঁচটি পর্চার আবেদনপত্র খলিলুর রহমান মোল্লা নামের এক স্ট্যাম্প ভেন্ডরের কাছ থেকে কিনেছেন। তার জবানবন্দি লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করেছেন রেকর্ড রুম ডেপুটি কালেক্টর সাইফুল ইসলাম।
আবেদনকারী মোনায়েম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মানুষকে পর্চা তুলে দেয়ার কাজ করে থাকি। এ জন্য তিনজন স্ট্যাম্প ভেন্ডরের কাছ থেকে পর্চা ও নকশার আবেদনপত্র কিনে থাকি। তার মধ্যে খলিলুর রহমান ভেন্ডরও আছেন। ওই আবেদনপত্র কার কাছ থেকে কেনা হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না। আমরা তো গ্রাহক। এগুলো ভালো না খারাপ জানব কীভাবে। আমরা ফরমের সঙ্গে কোর্ট ফি পাই। আসল-নকল বোঝার উপায় নেই, আমাদের কাছে তো মেশিন নেই। এগুলো প্রশাসনের দেখার কথা।’
রেকর্ড রুম ডেপুটি কালেক্টর সাইফুল ইসলাম আরও জানান, স্ট্যাম্প ভেন্ডর খলিলুর রহমান মোল্লাকেও ডাকা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম রেজিস্ট্রার বের করে তাকে দেখিয়ে নিশ্চিত হন, ওই সব পর্চার আবেদন তিনিই বিক্রি করেছেন। তবে খলিলুর নকল কোর্ট ফিগুলো সরবরাহ করেননি বলে দাবি করেছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জানান, সরকারি নানা ধরনের নকশা, পর্চা, দলিলের নকল, মামলার রায় ও আদালতের বিভিন্ন সেবা পেতে আবেদনপত্রে কোর্ট ফি ব্যবহার করা হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কোর্ট ফি বিক্রির জন্য স্ট্যাম্প ভেন্ডরদের লাইসেন্স দেয়া হয়। ওই সব স্ট্যাম্প ভেন্ডর সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারি থেকে কোর্ট ফি সংগ্রহ করেন। সে সব তারা বিভিন্ন স্থানে বসে বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেকর্ড রুমের ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেশ কিছু আবেদনপত্র মেশিনে পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে অর্ধশতাধিক আবেদনে লাগানো ২০ টাকার কোর্ট ফি জাল ধরা পড়ে। ঘটনার তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, স্ট্যাম্প প্রতারণার ঘটনায় শরীয়তপুর রেকর্ড রুমের কিপার আব্দুর রশিদ বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মামলা করেছেন।
স্ট্যাম্প জালিয়াতির অভিযোগে আটক ভেন্ডর খলিলুর রহমানকে ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশে হস্তান্তর করেছেন। তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান ওসি আক্তার হোসেন।
নকল কোর্ট ফি ব্যবহারে রাষ্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব। এ ধরনের ঘটনায় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন রেকর্ড রুম শাখার ডেপুটি কালেক্টর সাইফুল ইসলাম।