আকাশপথে নিষেধাজ্ঞায় হাজারো রুশ নাগরিক বিভিন্ন দেশে আটকা পড়েছে। এদের বড় একটি অংশই পর্যটক। প্রতিবেশী ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর আগে তারা পর্যটনের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছিলেন।
ইউক্রেনের ওপর মস্কোর হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ও কানাডা রাশিয়ার এয়ারলাইন্সের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে। একইসঙ্গে আটকে গেছে হাজার হাজার যাত্রীর বাড়ি ফেরা।
বার্তা সংস্থা আরটি জানায়, রাশিয়ান ট্রাভেল এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ২৭ হাজারের বেশি রুশ পর্যটক আটকা পড়েছেন। দেশে ফিরে যেতে তারা বিকল্প রুটও খুঁজে পাচ্ছেন না।
পশ্চিম আটলান্টিকের পর্তুগিজ দ্বীপ মাদেইরাতে প্রায় দুইশ’ রুশ নাগরিক ছুটি কাটাতে এসে আটকা পড়েছেন। রোববার তাদের রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু ওইদিন তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি জরুরি ফ্লাইট মধ্য-আকাশে ইউ-টার্ন করে মস্কোতে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও বিপাকে পড়েছে। যাত্রীরা চাপ দিচ্ছে এজেন্সিগুলোকে। এ অবস্থায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে বিকল্প রুট খুঁজে বের করার জন্য তারা এয়ারলাইন্সগুলোকে তাগাদা দিচ্ছে। কারণ অনেক এয়ারলাইন্স শুধু ইউরোপে নয়, উত্তর ও মধ্য আমেরিকায় তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে।
রাশিয়ান ট্রাভেল এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, রাশিয়ার পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স অ্যারোফ্লট যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, মিয়ামি, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং কানকুন ও মেক্সিকোতে ফ্লাইট বাতিল করেছে।
রাশিয়ার শীর্ষ পর্যটন কর্মকর্তা ড্যারিনা ডগুজোভা মঙ্গলবার জানান, আকাশপথে বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও রাশিয়ার পর্যটকদের জন্য মিশর ও তুরস্কের জনপ্রিয় স্থানগুলো উন্মুক্ত রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে বৃহস্পতিবার রাশিয়া আক্রমণ চালানোর পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো একে একে রাশিয়ান এয়ারলাইন্সের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করতে শুরু করে।
রাশিয়ার জন্য আকাশসীমা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথমেই কড়া বার্তা দিয়েছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়ন। সে সময় তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার মালিকানাধীন, রাশিয়ায় নথিভুক্ত অথবা রাশিয়ার কোনো সংস্থা দ্বারা পরিচালিত যেকোনো বিমানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমা বন্ধ করা হচ্ছে।’
সবশেষ রোববার তিনি জানান, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশ রুশ বিমানের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
পাল্টা হিসেবে সোমবার যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন, কানাডাসহ ৩৬টি দেশের সঙ্গে আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার সঙ্গে আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণা করার পাল্টা জবাবে পুতিন প্রশাসন এই পদক্ষেপ নেয় বলে জানানো হয়।
আকাশপথে পাল্টাপাল্টি এমন নিষেধাজ্ঞার পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার রুশ, যাদের বড় অংশই পর্যটক। কবে নাগাদ কোন রুটে কীভাবে তারা দেশে ফিরতে পারবেন তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।