বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘ছাত্রলীগ না করায়’ মারধর, উত্তপ্ত ক্যাম্পাস

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২২ ২০:১৫

নিহাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ না করার কারণে আমাকে ডাকা হয়। পারিবারিক সমস্যার কারণে আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে ছাত্রলীগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার চাইতেও নিষেধ করা হয়। বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে থাকতে পারব না, বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো মরতে হবে- এমন হুমকিও দেয়া হয়েছে।’

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রলীগ না করায়’ এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।

মঙ্গলবার বিকেলে শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়। শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় শিগগিরই সুষ্ঠু বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, মারধরে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মামলা, হলের টর্চার সেল বন্ধ, নিহাদের চিকিৎসা খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন, র‍্যাগিং বন্ধে অ্যান্টির‍্যাগিং সেল গঠন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও রাজনীতি করতে বাধ্যবাধকতা বন্ধ করা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হল প্রভোস্ট, হাউস টিউটরসহ অন্য শিক্ষকরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আশ্বাস দিলে হলে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।

চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার আশ্বাসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলে ফিরেছে। আমরা চাই এর পর থেকে কোনো শিক্ষার্থী যেন মারধরের শিকার না হয়। এ জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’

এর আগে ছাত্রলীগ না করায় রোববার রাতে ওয়ালিদ নিহাদ নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধরে আহত নিহাদকে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

নিহাদের অভিযোগ, তার ওপর রোববার রাত দেড়টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন চলে। বঙ্গবন্ধু হলের একাত্তর ব্লকে ডেকে নিয়ে তাকে যারা মারধর করেন, তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।

ছাত্রলীগ না করায় তাকে মারা হয় বলে দাবি নিহাদের।

শিক্ষার্থী নির্যাতনের কথা ছড়িয়ে পড়লে পরদিন সোমবার দুপুর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয় ক্যাম্পাসে। প্রতিবাদ বিক্ষোভে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন।

শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সোমবার বিকেলে অভিযোগটি পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার ও প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন তারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার রাতে মারধরে জখম নিহাদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

নিহাদ জানান, রোববার রাত দেড়টার দিকে তাকে ডেকে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু হলের একাত্তর ব্লকের ৩২৪ নম্বর কক্ষে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পলাশ তাকে ডেকে নেন। রুমটিতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাকে থাপ্পড় মারেন নাট্যকলা বিভাগের হিমেল। এরপর তুহিন, মুমিন, অ্যালেক্স সাব্বির, তানভীরসহ অন্তত ১০ জন তাকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। বুকের ওপর দাঁড়িয়ে মেরেছেন ফোকলোর বিভাগের আবু নাঈম আব্দুল্লাহ। রাত আড়াইটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

তিনি নিউজবাংলাকে আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ না করার কারণে আমাকে ডাকা হয়। পারিবারিক সমস্যার কারণে আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে ছাত্রলীগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার চাইতেও নিষেধ করা হয়।

‘বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে থাকতে পারব না, বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো মরতে হবে- এমন হুমকিও দেয়া হয়েছে।’

নিহাদ দাবি করেন, নির্যাতনের একপর্যায়ে তার বুকে রামদা ধরা হয়। তাকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে খালেদা জিয়ার ছবি আপলোড করানো হয়। তখন একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। জোর করে তাকে দিয়ে বলানো হয়, ‘২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের কুত্তা থাকবে না।’

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগকর্মী তুহিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ও আমার ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না, ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে শুনেছি এ ঘটনা। তাকে কে বা কারা নির্যাতন করছে আমি জানি না। তদন্ত করলে সব পরিষ্কার হবে।’

বিষয়টি জানতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস দিলেও জবাব দেননি তিনি।

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘অভিযোগে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা ছাত্রলীগকর্মী। আমাদের ইন্ধনে কেউ মারধর করেনি। ঘটনার দিন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম না। শুনেছি ব্যক্তিগত বিরোধে এ ঘটনা ঘটেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর