বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আ.লীগ নেতার কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে মরছে গরু

  •    
  • ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২৩:৩৯

চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সারফরাজ হোসেন বলেন, ‘নানিয়াটিকর গ্রামে একাধিক গরু মৃত্যুর তথ্য শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এ ছাড়া অসুস্থ গরুগুলোর চিকিৎসা চলছে। ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে গরুগুলো মারা গেছে। এখন আরও গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই কারখানা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে মানুষের ক্ষতি হতে পারে।’

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের নানিয়াটিকর গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেকের ব্যাটারি পোড়ানোর অবৈধ কারখানা থেকে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস।

উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের ওই গ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া বসানো কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে গত দুই মাসে ১৬টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে অনেক গরু।

অবৈধ কারখানার মালিক আব্দুল মালেক ভিয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য।

ব্যাটারি পোড়ানো কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় গরুগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে মানুষের ক্ষতি হতে পারে।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, কারখানাটি গড়ে ওঠার পর গত দুই মাসে ১৬টি গরু মারা গেছে। গ্রামের ৮-১০টি গরু অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, আত্রাই নদীর পাশে চিরিরবন্দরের নানিয়াটিকর গ্রামের আম ও লিচুর বাগানের ভেতর চার মাস আগে অবৈধভাবে কারখানাটি গড়ে তোলেন মালেক। কারখানার গ্যাস ও তাপে আশপাশের বহু আম, লিচু ও কাঁঠালগাছ পুড়ে গেছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কারখানার কার্যক্রম শুরু হয়ে চলে ভোররাত পর্যন্ত। এই কারখানায় পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। সেই সিসা ট্রাকে তুলে ঢাকায় বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হয়।

গ্রামের সূর্য বালা বলেন, ‘হামার বহুত ক্ষতি হইছে। ৫ হাজার টাকায় মোক গরু বিক্রি করতে হলি। এই ব্যাটারি কোম্পানির কারণে মুই একেবারেই শেষ হই গেছু। এখন মোর একখানই দাবি, এই ব্যাটারির কারখানা বন্ধ হোক।’

কৃষক পরেশ চন্দ্র বলেন, ‘ব্যাটারি কারখানার কারণে আমার একটি গরু মারা গেছে। একটি গরু অসুস্থ হয়ে বাড়িতে আছে। আমাদের ক্ষতি করে এমন কোনো ফ্যাক্টরি গ্রামে দরকার নেই। এই কারখানা বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।’

কৃষানি বুধু বালা বলেন, ‘কারখানার পাশেই মোর একখান গরু ঘাস খাইছে। এরপর বাড়িতে আসিয়া গরুখান ছটফট করিতে করিতে মরিয়া গেইল। কারখানা বন্ধ করিবার জন্যি বললে গ্রামের মানুষদের মারি ফেলবে বলি হুমকি দেয়। মুই এখন কী করুম।’

ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কমল রায় বলেন, ‘কারখানার কারণে গ্রামের অনেক গরু মারা গেছে। এ ছাড়া মানুষের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এলাকার লোকজন কারখানাটি ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু তারা আবার কারখানা চালু করেছে। আমি এলাকাবাসীর সঙ্গে আছি।’

কারখানার মালিক আব্দুল মালেক বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর আমাকে ৫ মার্চের মধ্যে কারখানা সরিয়ে নিতে বলেছে। আমি সেই সময়ের মধ্যে কারখানা সরিয়ে নেব।’

চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সারফরাজ হোসেন বলেন, ‘নানিয়াটিকর গ্রামে একাধিক গরু মৃত্যুর তথ্য শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এ ছাড়া অসুস্থ গরুগুলোর চিকিৎসা চলছে। ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে গরুগুলো মারা গেছে। এখন আরও গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই কারখানা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে মানুষের ক্ষতি হতে পারে।’

চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। তারা (কারখানা কর্তৃপক্ষ) খুব খারাপ কাজ করছে। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে কারখানাটি বন্ধে পদক্ষেপ নেব।’

এ বিষয়ে দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম ছামিউল আলম কুরশি বলেন, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কারখানাটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর