বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিনিয়োগ বাড়াতে বিডার ২৪ সুপারিশ

  •    
  • ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২৩:৩৭

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের যেসব সুপারিশ এসেছে তার অনেকগুলো নিয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। অধিক বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগুলো আমরা যুগোপযোগী করছি। বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার সব সুবিধা দিচ্ছে।’

এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও পরিবহন খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ রাখাসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কার চান বিনিয়োগকারীরা। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনে বিনিয়োগকারীরা এসব কথা জানিয়েছিলেন। তাদের এসব চাওয়া থেকে ২৪টিকে সুপারিশ আকারে নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। দেশের বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ উন্নয়নে এসব সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে সংস্থাটি।

সোমবার ঢাকায় বিডা আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সামিট-২০২১ (আইআইএস-২০২১) পোস্ট ইভেন্ট ওয়ার্কশপে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল) নুজহাত আনোয়ার, বিডার নির্বাহী সদস্য মোহসিনা ইয়াসমিন, এফসিডিও’র বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর জুডিথ হারবার্টসন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।

আইআইএস-২০২১ অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৮-২৯ নভেম্বর। সামিটে প্রাপ্ত বিনিয়োগ ঘোষণাগুলোর বাস্তবায়ন ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো পর্যালোচনায় হোটেল রেডিসন ব্ল‍ু ওয়াটার গার্ডেনে এই পোস্ট ইভেন্ট ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়।

ওয়ার্কশপে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের যেসব সুপারিশ এসেছে তার অনেকগুলো নিয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। অধিক বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগুলো আমরা যুগোপযোগী করছি। বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার সব সুবিধা দিচ্ছে।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতুসহ বেশ ক’টি মেগা প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে। এগুলো চালু হলে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত হবে। সরকার সব খাতেই ব্যক্তি-বিনিয়োগকে উৎসাহ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার শুধু নীতিসহায়তা দিচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি মিলে একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগের উর্বর ক্ষেত্র হবে।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে বিনিয়োগ সম্মেলনে স্বশরীরের পাশাপাশি অনলাইনেও অংশগ্রহণে সুযোগ ছিল। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। করোনায়ও সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে সরকার দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করেছে। এমনকি করোনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছে।

‘পদ্মা সেতুসহ বেশ ক’টি মেগা প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে। এগুলো চালু হলে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত হবে। তবে আমি বলব যে আমরা এখনো এফডিআইয়ে পিছিয়ে আছি। মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে তা এফডিআই বাড়াতে সাহায্য করবে। সরকার সব খাতেই ব্যক্তি-বিনিয়োগকে উৎসাহ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার শুধু নীতিসহায়তা দিচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি মিলে একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগের উর্বর ক্ষেত্র হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘অনেকে বলেন যে বিডার ওয়ানস্টপ সার্ভিস আরও কার্যকর করা সম্ভব। আমিও এর সঙ্গে একমত। এজন্য সমন্বয় জোরদার করতে হবে। তবে বিডার পাশাপাশি অন্য সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমাদের সেক্টরভিত্তিক নীতি রয়েছে। শুধু বিদ্যমান নীতিগুলোর কিছুটা সংস্কার করতে হবে।’

মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে আমাদের নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা দ্রুতই চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি এবং সে অনুযায়ী কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী এটি সব সময় নজরে রেখেছেন।’

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নিতে বিডা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এ জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি (ওএসএস)। ভোগান্তি ছাড়া দ্রুত এই সেবা নিতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু এ‌ই খাতে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে।’

বিডার পরিচালক সামিটে প্রাপ্ত ২৪টি বিনিয়োগ পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্কার সুপারিশমালা এবং সেগুলো বাস্তবায়নে বিডার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে অবকাঠামো খাতে সাতটি, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারে ৯টি, সেবা খাতে দুটি, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে তিনটি এবং সামষ্টিকভাবে বিনিয়োগের জন্য দুটি সুপারিশ হয়েছে। এই সুপারিশগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেবে বিডা।

অনুষ্ঠানে জাপানের অ্যাম্বাসেডর ইতো নাওকি বলেন, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শেষের দিকে রয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চে এটি উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত হচ্ছে। এটি শুধু দেশের নয়, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আনতেও প্রস্তুত হচ্ছে। এটি সফলভাবে যাত্রা শুরুর পর জাপান মিরসরাইয়ে আরেকটি ইকনোমিক জোন তৈরি করবে। শুধু জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলই নয়, আমি আশা করি অন্য অঞ্চলগুলোও দ্রুত এগিয়ে যাবে। আর তা বাংলাদেশে বিনিয়োগ আনতে কাজ করবে।’

তুর্কি অ্যাম্বাসেডর মোস্তফা ওসমান বলেন, ‘তুরস্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এদেশে নিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা বাংলাদেশকে একটি ইকনোমিক হাব হিসেবেই দেখছে। শুধু উৎপাদন নয়, বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যও রয়েছে তুরস্কের কোম্পানিগুলোর।’

কর্মশালায় বিডার পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম কী-নোট উপস্থাপন করেন। তাতে ভারত, চীন, জাপান, সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্য সরকারের শীর্ষ প্রতিনিধিদের বিনিয়োগ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি এবং সামিটের ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের বিনিয়োগ চুক্তি, সমঝোতা স্মারকের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।

বিডার পরিচালক সামিটে প্রাপ্ত ২৪টি বিনিয়োগ পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্কার সুপারিশমালা এবং সেগুলো বাস্তবায়নে বিডার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে অবকাঠামো খাতে সাতটি, আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারে ৯টি, সেবা খাতে দুটি, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে তিনটি এবং সামষ্টিকভাবে বিনিয়োগের জন্য দুটি সুপারিশ হয়েছে। এই সুপারিশগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেবে বিডা।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ সঞ্চালনে বেসরকারি খাতকে সুযোগ দিয়ে নীতি প্রণয়ন, জাতীয় লজিস্টিক কৌশল প্রণয়ন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইক্যুইটি ক্যাপ পুনর্বিবেচনা করা, পরিবহন খাত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা, বন্দর তদারকি ও পরিচালনায় প্রাইভেট সেক্টরের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা এবং এফডিআই’র জন্য বন্দর উন্নয়নসহ উন্মুক্ত করা।

আরো রয়েছে- আন্তর্জাতিক লজিস্টিক বিনিয়োগকারীদের প্রবেশের বাধা দূর করা, সরবরাহ ও গুদামজাতকরণের জন্য উন্নত মোবাইল নেটওয়ার্কভিত্তিক ডিজিটাল ট্র্যাকিং চালুকরণ ও গুনগত মান উন্নত করা, স্থায়ী সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্দেশিকা তৈরি ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিপিপি কাঠামো আধুনিক করা।

আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারের সুপারিশ

শিল্প-অর্থায়নের চাহিদা মেটাতে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণকে উৎসাহিত করতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থাকে আরও উদারীকরণের নীতি গ্রহণ করা। ব্যবসায়িক পুনর্গঠন এবং করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য দেউলিয়া আইনকে আধুনিক করা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও সুরক্ষিত বিল প্রণয়ন করা। নতুন নতুন আর্থিক উপকরণ প্রবর্তনের জন্য এবং বন্ড বাজারের আকর্ষণ নিশ্চিত করতে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

ঋণ ও ইক্যুইটি বিনিয়োগ আকর্ষণে পুঁজিবাজারের আধুনিকীকরণ এবং বিনিয়োগগকারীদের সুরক্ষায় প্রবিধান ও নির্দেশিকা তৈরিকরণ, জাতীয় টেকসই (লেবেলযুক্ত) বন্ডের গাইডলাইন প্রণয়ন, বিকাশ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং ইসলামী ব্যাংকিং সেবার জন্য প্রবিধান ও নির্দেশিকা তৈরি করা।

সেবা খাত

তথ্য-প্রযুক্তি খাতে এফডিআই আকৃষ্ট করতে নির্দেশিকা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করা, ফ্রি-ল্যান্সিং উৎসাহিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম খোলার অনুমতি দিতে শিক্ষা আইন পুনর্বিবেচনা করা।

উৎপাদন খাত

অন্তর্জাতিক পরিবেশ ও সামাজিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা, উচ্চ সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের জন্য ট্যারিফ ও প্যারা ট্যারিফ (হ্রাস) যুক্তিযুক্ত করা, আন্তর্জাতিক মান পূরণের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা।

সাধারণ সুপারিশ

সব ওয়ান-স্টপ সার্ভিস ও ব্যবসা-সম্পর্কিত পরিষেবাগুলো একীভূত করে একটি একক ওয়ান স্টপ শপ তৈরি করা, সরকার-টু-ব্যবসা পরিষেবা ও প্রবিধানগুলোর জন্য স্বচ্ছতা ও পদ্ধতিগত স্পষ্টতা নিশ্চিত করা এবং উদ্ভাবনী ব্যবসাকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এ বিভাগের আরো খবর