‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণে’ জড়িতদের দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আইআর বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা রহমান বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন হবে, বিকেল সাড়ে ৪টায় মুখ ও হাত কালো কাপড়ে বেঁধে প্রতিবাদ জানানো হবে এবং সন্ধ্যা ৭টায় ধর্ষকদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হবে।’
সোমবার সকাল থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। থানায় অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ওই ছাত্রীর একাধিক সহপাঠী জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনবাগের হেলিপ্যাড এলাকায় দাঁড়িয়ে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই ছাত্রী। সে সময় একটি অটোরিকশা থেকে নেমে সাত-আটজন ছাত্র তাদের গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যান। সেখানে বন্ধুকে মারধর করে ওই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন।
বুধবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমানের লিখিত আবেদন মামলা হিসেবে নেয় গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও র্যাব।
এর মধ্যে ৬ আসামিকে রোববার বিকেলে জেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে বিচারক হুমায়ুন কবির, তানিয়া সুলতানা লিপি ও শরিফুর রহমান আসামিদের কারাগারে পাঠান।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এই ৬ আসামিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তারা হলেন সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের রাকিব মিয়া ওরফে ইমন, শহরের মার্কাস মহল্লার পিয়াস ফকির, প্রদীপ বিশ্বাস ও হেলাল সরদার, নবীনবাগের নাহিদ রায়হান ও বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার তূর্য মোহন্ত।
এদিকে ধর্ষণের অভিযোগ জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। সবশেষ রোববার রাতে ক্যাম্পাসে মোমবাতি হাতে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ আছে।