গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ৪ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে রোববার বিকেলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রক্টর রাজিউর রহমান।
অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শেষে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোরাদ হোসেন নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। থানায় অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।ওই ছাত্রীর একাধিক সহপাঠী জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নবীনবাগের হেলিপ্যাড এলাকায় দাঁড়িয়ে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন ওই ছাত্রী। সে সময় একটি অটোরিকশা থেকে নেমে সাত-আটজন ছাত্র তাদের গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায়। সেখানে বন্ধুকে মারধর করে ওই ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাজিউর রহমানের লিখিত আবেদন মামলা হিসেবে নেয় গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে র্যাব ও পুলিশ।
ধর্ষণের অভিযোগ জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা অবরোধে হামলাকারীদেরও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
হামলার বিষয়টি সামনে এনে শনিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল রাজু।
‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’ ও হামলার প্রতিবাদে টানা চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা
নিউজবাংলাকে রাজু বলেন, ‘পুলিশের এসপি-ডিসির সবার সামনে বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সরাসরি অংশগ্রহণে বাস-ট্রাকশ্রমিকরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় হামলা চালান। এতে অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
‘শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে এলেও মারধর চালিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। উপাচার্য মহোদয় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে বারবার ফোন দিলেও কেউ সাড়া দেয়নি।’
ওই ঘটনার পর ক্যাম্পাসের বাইরে বিভিন্ন মেসে ছাত্র-ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় আন্দোলন থেকে সরে আসা সম্ভব নয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। উনি আশ্বাস দিলে তবেই আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরব।’
রাজুর এসব অভিযোগের বিষয়ে নিউজবাংলা যোগাযোগ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খায়রুল আলমের সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পেলে তার ব্যাখ্যা দেয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে রাজু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে কথা বললে তবেই শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাব।’