পুলিশ সদস্যের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বাহিনীর মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের কোনো পুলিশ সদস্য যখন আত্মহুতি দেন, তখন শুধু একটা মুখচ্ছবি হারাই না। আমাদের একজন কমরেডকে হারাই, প্রিয়জন, সাথী, সহকর্মী, বন্ধুকে হারাই।
‘একই সঙ্গে একটি পরিবার প্রিয় মানুষটিকে হারায়। স্বামী তার স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী তার স্বামীকে হারান, সন্তান বাবা কিংবা মাকে, বাবা-মা তার সন্তানকে হারায়। একটা বিশাল ক্যানভাস থেকে আমরা হারিয়ে ফেলি।’
রাজধানীর মিরপুর-১৪-তে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ স্টাফ কলেজ কম্পাউন্ডে বিভিন্ন দেশে পুলিশে কর্মরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের সম্মানে তৈরি পুলিশ মেমোরিয়ালের উদ্বোধন শেষে আইজিপি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, ‘পুলিশে চাকরির কারণে যেসব পরিবার ভালবাসার মানুষটিকে হারিয়েছেন, আমাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই। আমরা সেসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। সমস্ত ভালবাসা, দরদ দিয়ে সেসব সদস্যদের স্মরণ করছি।
‘আজ একটি তাৎপর্যময় গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজকে আমরা পুলিশ সার্ভিসের জন্য, বাহিনীর জন্য, পুলিশ মেমোরিয়াল উদ্বোধন করলাম। বিভিন্ন দেশেই এমন মেমোরিয়াল হল রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যখন যুদ্ধাবস্থা হয় দেশে, তখন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ডিফেন্স ফোর্সেস অংশ নেয়। শান্তিপূর্ণ সময়ে যারা দুষ্কৃতিকারী, দেশে ও জনগণ সমাজ রাষ্ট্র ধ্বংসের জন্য লিপ্ত হয়, তাদের বিরুদ্ধেই পুলিশ ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। যেখানেই যুদ্ধ সেখানেই প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, প্রাণহানি ঘটে। বিশ্বব্যাপী পুলিশ লাইন ডিউটিতে প্রাণ হারায়। আমরাও প্রতিবছর শত শত সহকর্মীকে হারাই কর্তব্যরত অবস্থায়।’
করোনার দুই বছরে ১০৬ জন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান জানিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘হাজার হাজার সদস্য অসুস্থ হয়েছে। সুস্থ হয়ে আবার কর্মে ফিরেছেন। পুলিশ ১৯৭১ সালেও বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথম বুলেট নিক্ষেপ করেছে। শাহাদাতবরণ করেছে।
‘এই যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে উঠা পুলিশ বাহিনী প্রথম শহাদাতবরণকারী বাহিনী। মানুষের জন্য, নিরাপত্তা শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য এখনো আত্মউৎসর্গ করে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালন করছি। মেমোরিয়াল-ডে তে ওই বছরে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের উপস্থিতিতে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। মেমেরিয়াল-ডে পালনের জন্য ইতিপূর্বে রেপলিকা স্মৃতি তৈরি করে পালন করা হয়েছে।'
আইজিপি বলেন, ‘আমাদের এখানে যে মেমোরিয়াল হল ও টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন সময়ে কর্তব্যরত অবস্থায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আত্মত্যাগ করা সদস্যদের নাম থাকবে। তাদের জীবনবৃত্তান্তের আর্কাইভ রয়েছে। ৭১ স্মরণে ৭১ ফিট টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশ মেমোরিয়াল দর্শণার্থীদের জন্য মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’