বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাদ্যের তালে লাঠির খেলা

  •    
  • ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০১:০৯

লাঠির ঠকঠকানি আর বাদ্যের তালে দুই দিন মুখর ছিল কুষ্টিয়ার টাউন হল ময়দান। লাঠিখেলা শুরুর আগে প্রতিটি দলই শারীরিক নানা কসরত দেখায়।

কুষ্টিয়ায় হয়ে গেল দুই দিনের লাঠিখেলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা। দেশের বিভিন্ন এলাকার ১০০ জন লাঠিয়াল সর্দার এসেছিলেন এই প্রশিক্ষণে। আয়োজক ছিল বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী।

প্রতিবার এ ধরনের প্রশিক্ষণে ৭০০ থেকে ১ হাজার লাঠিয়াল এলেও এবার করোনার কারণে সংখ্যা কমানো হয়েছে। এসব লাঠিয়াল তাদের নিজস্ব কৌশল দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন কসরত।

লাঠির ঠকঠকানি আর বাদ্যের তালে দুই দিন মুখর ছিল কুষ্টিয়ার টাউন হল ময়দান। লাঠিখেলা শুরুর আগে প্রতিটি দলই শারীরিক নানা কসরত দেখায়। নানা কৌশলে লাঠি ঘোরানো হয়। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ করা সবই ছিল ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে।

কখনও খেলা চলেছে দুজনে, কখনো আবার দলবদ্ধভাবে। ছিলেন যেমন প্রবীণ সর্দার, ছিলেন নবীনও। অপরূপ এসব কৌশল মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছে। বাঁশের তৈরি লাঠি ছাড়াও পুরো বাঁশ দিয়েও খেলার কৌশল দেখান অনেক ওস্তাদ।

লাঠিখেলা বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। ওস্তাদ ভাই সিরাজুল হক চৌধুরী গোল্ডেন সোর্ড ১৯৩৩ সালে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করেন। তিনি জীবিত অবস্থায় বাংলাদেশ ও ভারতে লাঠিখেলার প্রসার ঘটান। তার ছেলে মনজুরুল হক চৌধুরী রতনও লাঠিয়ালদের সংগঠিত করেন। তার মেয়ে রুপন্তি চৌধুরী লাঠিয়াল হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনিও মাঠে নামেন, দেখান অসামান্য কসরত। তিনি নিজে প্রতিপক্ষের আক্রমণ যেমন সামলেছেন দক্ষতায়, তেমনি হামলে পড়েছেন বাঘের মতো।

রুপন্তি চৌধুরী বলেন, ‘আমার দাদা ওস্তাদ ভাই সিরাজুল হক চৌধুরী প্রথমে নিখিল বাংলা লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন। পরে এর নাম হয় বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী।’

তিনি বলেন, ‘বংশপরম্পরায় আমি লাঠিখেলায় এসেছি। আমার দাদার পর আমার বাবাও লাঠি খেলতেন। তাদের সংগঠিত করেছিলেন। আমাদের বংশের অনেকেই লাঠিখেলা করেন। আমি ছোট থেকে দেখে দেখেই আসক্ত হই। ভীষণ ভালো লাগত। সেখান থেকে নিজ গরজে নিজ আগ্রহেই লাঠিখেলা শিখি।

‘আমি লাঠিখেলা নিয়ে অনেক ভেবেছি। কীভাবে করলে আরো ভালো হবে সেই চেষ্টা এখনো আছে। কীভাবে আরো আধুনিকভাবে এই খেলাকে উপস্থাপন করতে পারি- এই চেষ্টা আমি চালিয়ে যাচ্ছি।’

আয়োজকরা বলছেন, এই কর্মশালায় লাঠিয়ালদের মধ্যে লাঠিখেলার কৌশল বিনিময় হয়েছে।

লাঠিখেলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা ২০২২-এর আহ্বায়ক খ্যাতিমান শুটার সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকী বলেন, ‘অংশ নেয়া সব লাঠিয়ালই আলাদা কৌশল জানেন। এসব কৌশল যাতে হারিয়ে না যায় তাই এর বিনিময় হয়েছে। অন্যরাও কৌশলগুলো রপ্ত করছেন।’

তিনি বলেন, ‘ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে যাতে জাতীয়ভাবে লাঠিখেলার আয়োজন করা যায়, সে জন্য এর নিয়ম-কানুন আধুনিক করে তৈরি করা হচ্ছে।’

রুপন্তি চৌধুরী বলেন, ‘কিছু কিছু দলকে বিশৃঙ্খলভাবে চলতে দেখা যায়। এ কর্মশালার মাধ্যমে তাদেরও শৃঙ্খলায় আনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সদর দপ্তর কুষ্টিয়ায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এদের লাঠিয়াল সর্দার আছে। কিন্তু করোনার কারণে দুই বছর হলো এ সংগঠনের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ ছিল। এই কর্মশালার মধ্য দিয়ে তা আবার শুরু হলো। সংগঠনের পক্ষ থেকে লাঠিখেলাকে জাতীয় প্রতিযোগিতায় রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে। চেষ্টা রয়েছে ফেডারেশনভুক্ত করার।’

তিনি বলেন, ‘এ জন্য সব প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সরকার যদি আন্তরিক হয়, পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাহলে এই দেশীয় ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। এই খেলার সঙ্গে মাটির গন্ধ আছে। ঢোল আছে, খেলা আছে, লাঠিও বাঁশের তৈরি। সবই গ্রামীণ এবং মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত।’

লাঠিখেলা ছড়িয়ে দিতে জাতীয়ভাবে এ খেলার আয়োজন করার যে দাবি উঠেছে তা বাস্তবায়নে কাজ করার কথা বলেন আমন্ত্রিত অতিথিরাও।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে বড় আকারে যাতে লাঠিয়ালদের সমাবেশ ঘটানো যায়, তার জন্য আমি সহায়তা করব।’ তিনিও জাতীয় খেলার মধ্যে লাঠিখেলা যেন অন্তর্ভুক্ত হয়, সে দাবি জানান।

এ বিভাগের আরো খবর