দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এক হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিরোধী সব রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে, সব দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে ভয়াবহ এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে পরাজিত করতে হবে এবং সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে তাদের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে দুর্বল করা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীর বিডিআর সদরদপ্তরে বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত হয় ৭৪ জন।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় একটি অদৃশ্য বৃহৎ শক্তি জড়িত ছিল বলে দাবি করেন ফখরুল। জানান, বাংলাদেশকে দুর্বল করে রাখতেই দেশের ওপর চড়াও হয়েছিল। সে শক্তির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের যোগসাজস আছে বলে দাবি করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, যে সরকার আছে, সে সরকার তাদের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একাত্ম হয়ে তাদের লক্ষ্যকে চরিতার্থ করার জন্য কাজ করছে।’
যদিও বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর জড়িত থাকার প্রমাণ হয়। তাকেসসহ মামলায় ১৬১ জনকে দণ্ড দেয় সে বিচারে গঠিত বিশেষ আদালত। সেখানে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছিল ৮৫০ জনকে।
ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তা ধ্বংস করতেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে। সেনাবাহিনীর মনোবল ধ্বংস করে দেয়াই ছিল বিডিআর বিদ্রোহের গভীর ষড়যন্ত্র।’
বর্তমান সরকার সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে কাজ করছে বলে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘এরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লক্ষ্য একটাই বাংলাদেশকে একটি পরনির্ভরশীল নতজানু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা, যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।’
এ সময় তিনি বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন, যেটা সেনাবাহিনী করেছিল তার আংশিক প্রকাশ করা হয়েছিল, তার মূল অংশ প্রকাশ করা হয়নি। বেসরকারিভাবে যে তদন্ত প্রতিবেদন করা হয়েছিল সেটাও প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু কেন, কার স্বার্থে?’
বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিলখানায় সেনাবাহিনীকে না পাঠানোর সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন ফখরুল। সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিকভাবে নেয়া হয়েছিল বলে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিল ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে পাঠাবেন। তা তিনি করেননি, তা না করে বিদ্রোহীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করেছেন। ফলে সত্যিকার অর্থে আজকে এই দেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সবকিছুই বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’
এসব কিছুর মূল্যে গণতন্ত্রহীনতা বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। সরকার সব ধরনের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছেন বলেও দাবি করেন।
যুক্তরাষ্ট্র র্যাব ও র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটি দেশের জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার, স্বাধীন বাংলাদেশ ৫০ বছরেও আর একটিও এরকম লজ্জার মুখোমুখি হতে হয়নি। এখন আমরা সেই লজ্জার মুখোমুখি হয়েছি।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।